গাজী টায়ার্স কারখানায় লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য জানতে গণশুনানি
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ার্স কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য জানতে গণশুনানি করেছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত দল। গণশুনানিতে অংশ নিয়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন স্বজনেরা। স্বজনদের একটি অংশ প্রিয়জনদের খোঁজ পেতে আজ রোববার দুপুরে কারখানার বাইরে বিক্ষোভও করেছেন।
আগের ঘোষণা অনুযায়ী, আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে গাজী টায়ার্স কারখানার ভেতরে গণশুনানি শুরু হয়। চলে বেলা দুইটা পর্যন্ত। তদন্ত দলের পক্ষ থেকে একসঙ্গে পাঁচজন করে স্বজনের সঙ্গে কথা বলা হয়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের নাম–পরিচয় ও ছবি নেওয়ার পাশাপাশি তদন্ত দলের সদস্যরা ঘটনার বিষয়ে স্বজনদের বক্তব্য জানতে চান। স্বজনেরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জানান।
গণশুনানিতে অংশ নিতে আসা স্বজনদের একটি অংশ কারখানার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁরা বিক্ষোভ করে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান চেয়ে কারখানার ফটকের বাইরে স্লোগান দেন। পরে তাঁরা কারখানার সামনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। তদন্ত দলের প্রধান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমানের নেতৃত্বে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্য এবং শিক্ষার্থীরা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে প্রায় ১০ মিনিট পর তাঁদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেন।
সেখানে কথা হয় বৃদ্ধ নারী রাশিদা বেগমের সঙ্গে। টানা সাত দিন ধরে তিনি কারখানার সামনে আসছেন, তাঁর ছেলে আমানুল্লার খোঁজে। সড়কে বসেই ক্লান্ত গলায় চিৎকার করছিলেন। রাশিদা বেগম বলেন, ‘দিনের পর দিন যাইতাছে অথচ কেউ কইতাছে না আমার পোলা কই আছে। কারখানার সামনে আইলে কেউ কোনো কথা কয় না। আমাগো খেদাইয়া দেয়। এত এত লোক এনে আইতাছে, কেউ লাশের কোনো খোঁজ জানাইতে পারতাছে না। ওরা বাঁইচা থাকলে আমাগো কাছে ফিরাইয়া দিতে হইব, আর আগুনে পুইড়া গেলে হাড্ডিগুড্ডি অইলেও দিতে অইব। লাশ না পাইলে আমরা কারখানার সামনে থেইকা যামু না।’
২৫ আগস্ট গাজী টায়ার্স কারখানায় লুটপাটের পর আগুন দেওয়ার ঘটনায় ঠিক কতজন নিখোঁজ আছেন, ঘটনার সাত দিন পরেও সরকারি কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে তা জানানো হয়নি। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে এখন আর কোনো তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না। তবে এ ঘটনায় অন্তত ১৮৪ জন নিখোঁজ থাকার দাবি করছেন স্বজনেরা।
গণশুনানি শেষে তদন্ত দলের প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গণশুনানিতে ৭৮টি পরিবার অংশ নিয়েছে। পরিবারগুলোর সদস্যরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্য যাচাই–বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করবেন। শিগরিই ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
বেলা দুইটায় যখন তদন্ত দল কারখানা থেকে বের হয়, তখনো নিখোঁজ ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি হাতে কারখানার সামনে কয়েকজন স্বজন অপেক্ষা করছিলেন। তাঁদের ভাষ্য, নিখোঁজ ব্যক্তিরা বেঁচে থাকলে সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে, আর কারখানায় পুড়ে মারা গেলে তাঁদের দেহাবশেষ খুঁজে দিতে হবে।