সেন্ট মার্টিনের তিনটি রিসোর্টে আগুনের ঘটনায় অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন
প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে আগুনে তিনটি রিসোর্টের ২৬টি কক্ষ পুড়ে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনের ঘটনার পর দ্বীপের হোটেল-মোটেলগুলোর অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দ্বীপে বিভিন্ন মানের আড়াই শ আবাসিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও কয়েকটি ছাড়া বাকিগুলোর অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো সরকারি ব্যবস্থাও।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গলাচিপা এলাকার বিচ ভ্যালি, কিংশুক ও সাইরি ইকো রিসোর্টে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ইকো রিসোর্টের মালিকদের বরাত দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, মধ্যরাতে পশ্চিম সৈকতের গলাচিপায় অবস্থিত সাইরি ইকো রিসোর্টের অভ্যর্থনাকক্ষে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে সাইরির অভ্যর্থনাকক্ষের পাশাপাশি পাশে থাকা বিচ ভ্যালির ১৮টি কক্ষ ও কিংশুক ইকো রিসোর্টে ৭টি কক্ষ পুড়ে যায়।
মুজিবুর রহমান বলেন, কাঠ আর বাঁশ দিয়ে তৈরি কাঠামো থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা, পর্যটক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চেষ্টায় ভোর ৪টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার সময় পর্যটকেরা কক্ষের বাইরে থাকায় কেউ হতাহত হননি। তবে অনেকের মালামাল পুড়ে গেছে।
দ্বীপের বাসিন্দা ও সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রথমে সাইরি ইকো রিসোর্টে আগুন লাগে। পরে সেখান থেকে আরও দুটি রিসোর্টে ছড়ায়। খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন, কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।
সেন্ট মার্টিনে দায়িত্বে থাকা টেকনাফ-২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তা মেজর ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আগুন লাগার খবর শুনে বিজিবির সদস্যরা স্থানীয় মানুষের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেছে। তবে আগুন নেভাতে গিয়ে স্থানীয় ছয়জন আহত হন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
কিংশুক ইকো রিসোর্টে স্বত্বাধিকারী সরওয়ার আলম বলেন, তিনটি রিসোর্টে প্রাথমিকভাবে ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, ‘হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নিই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ-বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।’
সেন্ট মার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপটিতে বিভিন্ন মানের আড়াই শ আবাসিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও যেখানে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা কী, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। মাত্র কয়েকটি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নেই। আর আগুন নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো সরকারি ব্যবস্থাও। ফলে এ বিষয়ে এখন গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায়, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন বলেন, ঘটনা তদন্তে টেকনাফের ইউএনওকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও সুপারিশমালা প্রণয়নে দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানান জেলা প্রশাসক।