এভারেস্টজয়ী বাবর এবার বিপজ্জনক পথে পা বাড়াচ্ছেন, জানেন, কোন সে পথ?

বাবর আলীছবি: সংগৃহীত

একের পর এক কঠিন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন পর্বতারোহী বাবর আলী। গত বছরের ১৯ মে সকালে বাবর আলী দেশের গণমাধ্যমের খবর হয়েছিলেন। সেদিন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছিলেন তিনি। দুই দিন পর লোৎসে পর্বতের শীর্ষও ছুঁয়েছিলেন। এবার আরও বিপজ্জনক পথে পা বাড়াচ্ছেন এই তরুণ। কোথায় যাচ্ছেন তিনি?

বাবরের নবযাত্রার আদ্যোপান্ত জানার আগে চলুন একটু পেছনে ফিরে যাই। গত বছরের ৩০ মার্চ এমন এক ক্ষণে চট্টগ্রাম নগরের প্রেসক্লাবে হাজির হয়েছিলেন তিনি। সেদিন নতুন এক রেকর্ড গড়ার ঘোষণা দেন। এর আগে দেশের কোনো পর্বতারোহী একই অভিযানে পর পর দুটি আট হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার পর্বতে পা রাখেননি। বাবর সেদিন বলেছিলেন, কঠোর পরিশ্রম করে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি একই অভিযানে দুটি আট হাজারি শৃঙ্গের চূড়ায় দাঁড়াবেন। এরপর ১৯ মে সকাল সাড়ে আটটায় এভারেস্টের (৮৮৪৮ মিটার) চূড়ায় ও ২১ মে লোৎসে পর্বতের শীর্ষ (৮৫১৬ মিটার) ওঠেন।

দুই ঘটনার পর শোরগোল পড়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাবরকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেন তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এই দুই অভিযান নিয়ে প্রথম আলোতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নেপাল থেকে ফিরে এসে বাবর নিজেও প্রথম আলোতে তাঁর অভিজ্ঞতার বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। অবশ্য এরপর অনেক দিন বাবর কোথায় যেন ডুব দিয়েছিলেন। তাঁকে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাবরের সঙ্গে দেখা হলো। তিনি এসেছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে। জানালেন কী সেই বিপজ্জনক অধ্যায় শুরু হচ্ছে। বাবরের ‘অন্নপূর্ণা-যাত্রা’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে অভিযানের উদ্যোক্তা সংগঠন পর্বতারোহণ ক্লাব ‘ভার্টিক্যাল ড্রিমার্স’।

এতে বাবর জানান, উচ্চতার দিক দিয়ে পৃথিবীর দশম স্থানে রয়েছে অন্নপূর্ণা-১ পর্বত, উচ্চতা ৮ হাজার ৯১ মিটার। এই পর্বতের পরতে পরতে বিপদ লুকিয়ে থাকে। এবার বিপজ্জনক এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়াতে যাচ্ছেন তিনি। অভিযানের জন্য ২৪ মার্চ সকালে নেপালের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন।

সংবাদ সম্মেলনে বাবর বলেন, প্রয়োজনীয় অনুমতি ও নানা সরঞ্জাম কেনা শেষে কাঠমান্ডু থেকে পোখারা হয়ে তাতোপানির উদ্দেশে রওনা দেবেন। দিন চারেকের ট্র্যাক শেষে পৌঁছাবেন অন্নপূর্ণা নর্থ বেস ক্যাম্পে। এখান থেকেই শুরু হবে মূল অভিযান। ৩০ মার্চ থেকে মূল অভিযান শুরু করার আশা করছেন তিনি। ওঠানামায় অন্তত এক মাস সময় লাগবে। আর পুরো অভিযান শেষ করতে সময় লাগবে অন্তত ৪০ দিন।

সংবাদ সম্মেলনে বাবর আলীর হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সদস্যরা। আজ দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে
ছবি: প্রথম আলো

এভারেস্টের চেয়েও এই পর্বত বিপজ্জনক বলে প্রথম আলোকে জানান বাবর। তিনি বলেন, পৃথিবীতে এভারেস্টের সমকক্ষ উচ্চতার (৮ হাজার মিটার) পর্বতশৃঙ্গ আছে ১৪টি। এর মধ্যে অন্নপূর্ণা-১ অন্যতম বিপজ্জনক পর্বত হিসেবে স্বীকৃত। এই পর্বতের গায়ে খাড়া ঢাল। তুষারধস হয় যেকোনো পর্বতের চেয়ে বেশি। আবহাওয়াও বদলায় ক্ষণে ক্ষণে। এসব কারণে পর্বতারোহীদের কাছে এটি সব সময় কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে বিবেচিত হয়ে এসেছে। এই ভয়ানক পর্বতের চূড়ায় এর আগে কোনো বাংলাদেশি দাঁড়াননি।

সংবাদ সম্মেলন ও পতাকা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের সভাপতি ও অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, এভারেস্টে মৃত্যুর হার যেখানে মাত্র ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, সেখানে অন্নপূর্ণা ১-এ মৃত্যুর হার ৩৮ শতাংশের মতো। এ কারণে এই পর্বতে খুব কম পর্বতারোহী অভিযান করেন। প্রতিবছর গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন অভিযানে যান। ফরাসি পর্বতারোহী মাউরিস হার্যোগ এবং লুইস ল্যাচেনাল ১৯৫০ সালের ৩ জুন অন্নপূর্ণা ১-এর চূড়ায় প্রথম আরোহণ করেছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের উপদেষ্টা শিহাব উদ্দীন, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ নুর ফয়সাল। এই অভিযানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে থাকছে ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যাল।