নেতাদের নাম ধরে ধরে ক্ষমা চাইলেন সংসদ সদস্য একরামুল করিম
দলের নেতাদের নাম ধরে ধরে ক্ষমা চাইলেন নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে নিজের বক্তৃতার সময় তিনি সবার কাছে ক্ষমা চান। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর কবিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের কাছে ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি।
গতকাল জেলা শহরের শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে দেওয়া বক্তৃতায় একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এখানে বেলায়েত ভাই (জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ বাহিনীর বৃহত্তর নোয়াখালীর কমান্ডার) আছেন, সাকি আপাও (বেগম ফরিদা খানম সাকি) আছেন, মোহাম্মদ আলী সাহেব (হাতিয়ার সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি) আছেন, আমাদের আয়েশা আপা (হাতিয়ার সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস), আমাদের কিরণ ভাই (সংসদ সদস্য মামনুর রশিদ কিরণ), মোরশেদ ভাই (সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম), ইব্রাহিম (সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম) আছেন। আমি আপনাদের কাছে আমার দল পরিচালনার সময় যদি মনে কোনো কষ্ট দিয়ে থাকি, হাত জোড় করে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ভুলে যান, আজ বাদে কাল হয়তো মরেও যেতে পারি। আপনিও মরে যেতে পারেন। আমরা একে অপরকে ক্ষমা করে আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে সবাই মিলে একত্রে কাজ করি।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একরামুল করিম চৌধুরী ২০০৪ সালে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখন সভাপতি নির্বাচিত হন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও প্রবীণ রাজনীতিক অধ্যাপক মো. হানিফ। ২০০৯ সালের নির্বাচনে দল ক্ষমতায় আসার পর অধ্যাপক হানিফের সঙ্গে একরামুল করিমের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে একটি বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় প্রবীণ ওই রাজনীতিবিদকে। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় একরামুলের অনুগত হিসেবে পরিচিত সহসভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিমকে।
সূত্র জানায়, পরে ২০১৪ সালের সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ সভাপতি নির্বাচিত হন এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী। এরপর ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বরের সম্মেলনেও তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। দলের নেতা-কর্মীদের মতে, খায়রুল আনম চৌধুরীকে দলের সভাপতি করা হলেও আদতে তাঁর মতের কোনো গুরুত্ব দিতেন না সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী। যেটার চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটেছে ২০১৯ সালের সম্মেলনের পর তৈরি করা প্রস্তাবিত চূড়ান্ত কমিটিতে। কেন্দ্রে কমিটি জমা দেওয়ার পর বিতর্কিত লোকজনকে কমিটির অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ ওঠে সাধারণ সম্পাদক একরামুলের বিরুদ্ধে।
প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীও স্বীকার করেছেন প্রস্তাবিত কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাঁর মতামত না নেওয়ার বিষয়টি। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাইকমান্ড হলেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা যে কমিটি গ্রহণ করেন না, সেটা কমিটি হতে পারে না। আমরা একটি কমিটি করেছিলাম। ওই কমিটি একক কর্তৃত্বে হয়েছে। আমাদের কারও কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এ জন্য আমাদের দুঃখ নেই। তিনি (শেখ হাসিনা) বুঝতে পেরেছেন আমাদের সমস্যা।’
দলীয় সূত্র জানায়, বিতর্কের মুখে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত কমিটি বিলুপ্ত করে ৮৭ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই কমিটিতে খায়রুল আনম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করা হয়। আর সাধারণ সম্পাদকের পদ হারিয়ে একরামুলের ঠাঁই হয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে। গতকালের সম্মেলনে একরামুল সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত হননি। তাই এখন নতুন কমিটিতে তাঁর অবস্থান কোথায় হয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় দলের নেতা-কর্মীরা।
একরামুল করিম চৌধুরীর বারবার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের বিদায়ী আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাব উদ্দিন শাহিন আজ মঙ্গলবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি সব সময় সুযোগসন্ধানী লোক। সব সময় ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করেন। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ চিন্তা করেন। উনি নেতাদের চরিত্র হনন করেন। আবার ক্ষমাও চান। আমি বলব, ওনার হাতে আওয়ামী রাজনীতি কখনো নিরাপদ ছিল না। এখন তো নিরাপদ নয়ই।’