সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টি ছিল চাঁদপুরে। তবে কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি ঝরেছে। এরই মধ্যে শহরের পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়েছিল শিখো-প্রথম আলো কৃতী সংবর্ধনা। আশঙ্কা ছিল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে। সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে সকাল আটটা বাজতেই অনুষ্ঠানস্থলে চাঁদপুর শহরসহ উপজেলার কৃতী শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে আসতে থাকে। তাদের সঙ্গে আসে তাদের অভিভাবকেরাও। অনুষ্ঠানস্থলে শুরু থেকেই সৃষ্টি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজ চাঁদপুরে শিখো ও প্রথম আলোর আয়োজনে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ আয়োজনে জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় এক হাজার কৃতী শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। তাদের মধ্যে আট শতাধিক শিক্ষার্থী বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৃথক বুথ থেকে স্ন্যাকস ও ক্রেস্ট সংগ্রহ করে। এরপর দল বেঁধে ছবি তোলে। কেউ কেউ তোলে সেলফি। সহপাঠীদের সঙ্গে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠে কৃতী শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টার সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক বদরুন নাহার চৌধুরী, ভেন্যুপ্রধান পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার, প্রথম আলোর হেড অব কালচারাল প্রোগ্রাম কবির বকুল, প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চাঁদপুর বন্ধুসভার সভাপতি রিফাত কান্তি সেন ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন চাঁদপুর বন্ধুসভার বন্ধুরা।
বদরুন নাহার চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে প্রথম আলোর ভালো কাজকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা সব সময় প্রথম আলোর সঙ্গে আছি, থাকব। নিজেকে আলোকিত করব।’ চাঁদপুরের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ঘোষণা দেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।
অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার বলেন, ‘জিপিএ-৫ জীবনের সবকিছু নয়। জিপিএ- ৫ পেয়ে কতটুকু মানুষ হতে পেরেছ, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ নাগরিক হতে পেরেছ সেটাই বড় বিষয়, বড় কথা।’
অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থ—এ তিন ‘ম’কে না বলার শপথ করান কবির বকুল। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান প্রথম আলো চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশ।
কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেয় শাহরাস্তি হোসেনপুর গাউসিয়া মাদ্রাসার কৃতী শিক্ষার্থী উম্মে সায়মা ও চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের কৃতী শিক্ষার্থী মো. কায়সান। অভিভাবকদের মধ্যে বক্তব্য দেন আবদুল মতিন। উম্মে সায়মা বলে, ‘এ ধরনের সুন্দর অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য প্রথম আলোকে ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ আরও ভালো করার উৎসাহ প্রদান করার জন্যও ধন্যবাদ।’ মো. কায়সান বলে, ‘অনেক কষ্ট করে, সংগ্রাম করে, বহু ত্যাগ স্বীকার যারা জিপিএ পেয়েছে। তাদের জন্য আজকের দিনটি অনেক আনন্দের ও স্মরণীয়। আমি চাই, এ উৎসাহ–উদ্দীপনার কারণে এখান থেকে আগামী দিনেও সবাই জিপিএ পাবে। আমাদের মধ্য থেকে কেউ ভবিষ্যতে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে ও শিক্ষক হবে। দেশ ও সমাজের বড় বড় দায়িত্ব নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলবে।’
পরে কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে গান পরিবেশন করে সানজিদা আলম, মিতা ও সিথী। কবিতা আবৃত্তি করে মেহেরুন ও মেরিন। চাঁদপুরের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী সোমা দত্তের দল দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে পরপর দুটি নৃত্য পরিবেশন করে। এ ছাড়া ঢাকার আলোচিত শিল্পী মিথুন দে পরপর ছয়টি গানের মাধ্যমে পুরো মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন।
সারা দেশের ৬৪ জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
দিনব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, সনদ, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস বক্স।