এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ সদস্য হত্যায় মামলা, আওয়ামী লীগের চার নেতাসহ আসামি ছয় হাজার

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানাফাইল ছবি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ১৫ পুলিশ সদস্যকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত রোববার রাতে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতাকে আসামি করে মামলাটি করেন। এ ছাড়া এতে অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচ–ছয় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে; ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে চার কোটি টাকা।

আসামিরা হলেন, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান (বাচ্চু), সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। আজ মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আহমদ মোস্তফা খানের অবৈধ দাবি মেনে না নেওয়ায় পুলিশের ওপর তাঁর ক্ষোভ ছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক স্কুল শিক্ষার্থীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা এক আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেছিলেন আহমদ মোস্তফা খান। পুলিশ ওই দাবি মেনে নেয়নি। ওই আসামিকে ছাড়াতে আহমদ মোস্তফা খানের নেতৃত্বে ৪৫০–৫০০ জন থানা ঘেরাও করেছিল। তখন ওসি আবদুর রাজ্জাককে অপসারণের দাবিও করেছিলেন তিনি।

৪ আগস্ট দুপুর ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা এনায়েতপুর থানার সামনে সমবেত হয়। এ সময় ওসি আবদুর রাজ্জাক হ্যান্ড মাইক দিয়ে সমবেত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন এবং তাঁরা চলে যান। পরে আসামি আহমদ মোস্তফা খানের নেতৃত্বে আসামিসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার দুষ্কৃতকারী দেশি অস্ত্র নিয়ে থানায় হামলা চালায়। তারা পুলিশের কোয়ার্টার ও ওসির বাসভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। আসামিরা থানা কম্পাউন্ডে উপপরিদর্শক (এসআই) তহছেনুজ্জামান, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ওবায়দুর রহমান, কনস্টেবল আরিফুল আজম, রবিউল আলম শাহ, হাফিজুল ইসলাম, শাহিন, রিয়াজুল ইসলামকে পিটিয়ে ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক, এসআই আনিছুর রহমান, এসআই রহিজ উদ্দিন খান, এসআই প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, কনস্টেবল আবদুস সালেক, কনস্টেবল হানিফ আলী পাশে বাবু মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আসামিরা সেখানে গিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে তাঁদের হত্যা করেন। এক নারী কনস্টেবলকেও শ্লীলতাহানি করা হয়।

আরও পড়ুন

এজাহারে পাঁচটি পিস্তল ও আটটি ম্যাগাজিন, একটি চায়না পিস্তল ও দুটি ম্যাগাজিন, চারটি চায়না রাইফেল ও ৩৭টি চার্জার, দুটি চায়না রাইফেল টাইপ ও দুটি ম্যাগাজিন, ছয়টি ১২ বোর শর্টগান, একটি ৩৮ মিমি গ্যাসগান লঞ্চারসহ গুলি লুট করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুলিশ সুপার আরিফুল রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ৪ আগস্ট হামলায় এনায়েতপুর থানা পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে যায়। ৬ দিন বন্ধ থাকার পর ১০ আগস্ট থানায় আবারও কার্যক্রম শুরু হয়। তবে সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। পরে থানার পাশেই একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে নতুন করে থানার কার্যক্রম শুরু হয়। এসব কারণে পুলিশ হত্যা মামলাটি করতে কয়েক দিন দেরি হয়েছে।

আরও পড়ুন
৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষে এনায়েতপুরে কলেজছাত্র শিহাব হোসেন (১৯) তাঁত শ্রমিক ইয়াহিয়া আলী (৩৫) ও মাদ্রাসাছাত্র সিয়াম হোসেন (২২) নিহত হন।

এদিকে, ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘর্ষে এনায়েতপুরে কলেজছাত্র শিহাব হোসেন (১৯) তাঁত শ্রমিক ইয়াহিয়া আলী (৩৫) ও মাদ্রাসাছাত্র সিয়াম হোসেন (২২) নিহত হন। এ ঘটনায় গত ২০ ও ২১ আগস্ট এনায়েতপুর থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়। তিনটি মামলায় সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি-চৌহালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মমিনসহ ২০৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি আরও ৭০০ জন।

নিহত কলেজছাত্র শিহাব হোসেন হত্যার অভিযোগে তাঁর পরিবারের পক্ষে এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. সোলাইমান মামলা করেন। ইয়াহিয়া আলী হত্যায় তাঁর স্ত্রী শাহানা খাতুন এবং সিয়াম হোসেনের পরিবারের পক্ষে এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হযরত আলী বাদী হয়ে মামলা করেন।