রাজশাহীর বাতাসে মানবদেহের ক্ষতিকর বস্তুকণা আরও বেড়েছে
বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ক্ষুদ্র বস্তুকণা কমিয়ে বিশ্বসেরা নির্মল বায়ুর খ্যাতি অর্জন করেছিল রাজশাহী। এবার এ শহরের বায়ুতে ক্ষতিকর ক্ষুদ্র বস্তুকণা মান বেড়েছে। আজ শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী শহরের ছয়টি স্থানের বায়ুর মান পরীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে।
নগরের তালাইমারী মোড়, এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বর (রেলগেট), সাহেববাজার জিরো পয়েন্ট, লক্ষ্মীপুর মোড়, বিসিক মঠপুকুর ও বন্ধ গেট এলাকায় বায়ুর পরীক্ষা চালায় সংগঠনটি।
এর আগে ২০২২, ২০২৩ সালে নগরের পাঁচটি জায়গায় বায়ুর মানের পরীক্ষা চালায় সংগঠনটি। তাদের পরীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যাচ্ছে, শহরটিতে ক্রমেইও বায়ুদূষণ বাড়ছে। অথচ বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনায় ২০১৬ সালে বিশ্বসেরা হয়েছিল রাজশাহী। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উপাত্তের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তখন প্রকাশ করা হয়।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাজশাহীর বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা (১০ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ১৯৫ মাইক্রোগ্রাম। এটা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কমে ২০১৬ সালে দাঁড়ায় ৬৩ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রামে। দুই বছর আগে এ শহরে আরও ক্ষুদ্র ধূলিকণা (২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ছিল ৭০ মাইক্রোগ্রাম। ২০১৬ সালে এটি প্রায় অর্ধেক হয়ে দাঁড়ায় ৩৭ মাইক্রোগ্রাম।
বাংলাদেশে বায়ুর নির্ধারিত মান অনুযায়ী, বাতাসে ভাসমান ক্ষুদ্র ধূলিকণা (১০ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম এবং আরও ক্ষুদ্র ধূলিকণা (২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ৬৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরা হয়।
আজ শনিবারের পরীক্ষায় তালাইমারী মোড়ে ১০ মাইক্রোমিটার আকারের কণা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাওয়া গেছে ১৩০ মাইক্রোগ্রাম। একই স্থানে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের কণা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাওয়া গেছে ১০৬ মাইক্রোগ্রাম।
এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে এই পরিমাণ যথাক্রমে ১৯০ ও ১২৫ মাইক্রোগ্রাম, সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ১০৩ ও ৭১ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর মোড়ে ৯৩ ও ৬৮ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক এলাকায় ১১৭ ও ৯০ এবং বন্ধ গেট এলাকায় ১৪৫ ও ১১৫ মাইক্রোগ্রাম।
গত বছরের নভেম্বরে তালাইমারী মোড়ে ১০ মাইক্রোমিটার আকারের কণা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাওয়া গেছে ২৪৬ মাইক্রোগ্রাম। একই স্থানে ২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের কণা প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পাওয়া গেছে ৯৭ মাইক্রোগ্রাম। এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে এই পরিমাণ যথাক্রমে ২৩১ ও ৯৩ মাইক্রোগ্রাম, সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে ২২৫ ও ৮৮ মাইক্রোগ্রাম, লক্ষ্মীপুর মোড়ে ২২৯ ও ৯৪ মাইক্রোগ্রাম, বিসিক মঠপুকুর এলাকায় ২২২ ও ৭৬ মাইক্রোগ্রাম।
রাজশাহীর বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে আজকের পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেন গবেষক ও সংগঠনটির সভাপতি মো. জাকির হোসেন। তাঁকে সহযোগিতা করেন সংগঠনটির কোষাধ্যক্ষ অলি আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ, সদস্য শামসুর রাহমান, কলি আহমেদ প্রমুখ। তাঁরা বলেন, ২০২২ সাল থেকে তাঁরা রাজশাহীর বায়ুর মান পরীক্ষা করে আসছেন। প্রতিবার নগরের পাঁচটি স্থানে পরীক্ষা চালালেও এবার বন্ধ গেটেও পরীক্ষা চালানো হয়েছে। তাদের ধারাবাহিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। আজকের পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ক্ষুদ্র ধূলিকণা (২ দশমিক ৫ মাইক্রোমিটার আকারের) প্রতি ঘনমিটার বাতাসে বেশি পাওয়া গেছে রেলগেট এলাকায়। এখানে বায়ুদূষণ বিধিমালা-২০২২ মানা হয়নি। এ ধরনের বায়ু মানুষের ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। রাজশাহী শহরে অনেক নির্মাণকাজ চলছে। এগুলোর কোনোটিই নিয়ম মানছে না। এ কারণে দূষণটা বেড়েই চলেছে।