ময়মনসিংহে তুলে নিয়ে নির্যাতনের শিকার কিশোরীর মৃত্যু, বিচার দাবি এলাকাবাসীর
প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিন মাস আগে ময়মনসিংহের নান্দাইলে এক কিশোরীকে (১৪) তুলে নেওয়া হয়েছিল। গত সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে বাড়ির পাশে তাকে আহত অবস্থায় কে বা কারা ফেলে রেখে যায়। চিকিৎসা চলছিল তার। গতকাল সোমবার দুপুরে নিজ বাড়িতেই সে মারা যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে আজ মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। এদিকে কিশোরীকে নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে আজ এলাকায় মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশ ও কিশোরীটির পরিবার থেকে জানা গেছে, সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করত। তাকে উপজেলার দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক কিশোর প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করত। নিহত কিশোরীর পরিবার থেকে করা মামলায় ছেলেটির বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর।
ওই কিশোরীর পরিবারের দাবি, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে চলতি বছরের ১ জুন অপহরণ করে নিয়ে যায় দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রটি। তিন মাস নারায়ণগঞ্জের একটি এলাকায় মেয়েটিকে আটকে ধর্ষণ করা হয়। এ ছাড়া তার ডান চোখ ক্ষত করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর মেয়েটিকে বাড়ির পাশের সড়কে আহত অবস্থায় ফেলে যায়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ছাত্রীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন স্বজনেরা। চোখের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ১৫ দিন চিকিৎসা শেষে ছাত্রীর ডান চোখ বাঁচাতে কর্নিয়া তুলে ফেলা হয়। সেই কর্নিয়া তার পরিবার নিজেদের রেফ্রিজারেটরে রেখে দেয় উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের জন্য।
এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা গত ৯ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণের অভিযোগে নালিশি (সিআর) মামলা করেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহের উপপরিদর্শক মোসলেম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দায়ের করা মামলাটির সত্যতা আছে কি না, আদালতে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। এ মামলায় আসামি ধরার সুযোগ নেই। অপহরণের ধারায় মামলাটি হলেও তদন্তকাজ শুরু করলে ধর্ষণের বিষয়টি সামনে এলে কিশোরীটির পরীক্ষা করা হয় হাসপাতালে। সেই সঙ্গে সে আদালতে জবানবন্দিতে জোর করে তুলে নেওয়ার কথা বলেছিল। তদন্তে আমরা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। চিকিৎসকের প্রতিবেদন পেলেই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
এর মধ্যে ওই কিশোরী গতকাল দুপুরে নিজ বাড়িতে মারা যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে এলাকাবাসী আজ নান্দাইল-হোসেনপুরে সড়কের নারায়ণপুর এলাকায় দুপুর ১২টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মানববন্ধন করেন। এ সময় এলাকাবাসী ওই কিশোরীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেন। জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। এ সময় কিশোরীটির মা বলেন, ‘নির্মমভাবে নির্যাতন চালানোর কারণে অসুস্থ হয়ে আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত কিশোর ও তার পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ আহমেদ বলেন, কিশোরীকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় আদালতে করা মামলা পিবিআই তদন্ত করছে। গতকাল দুপুরে নিজ বাড়িতে মেয়েটি মারা যায়। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ আজ সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মেয়েটিকে তুলে নেওয়ার পর অত্যাচার-নির্যাতন করায় চোখ গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল। চিকিৎসা করালেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।