‘নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে’ উপসহকারী প্রকৌশলীকে নিজ কার্যালয়ে মারধরের অভিযোগ
মাগুরায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক উপসহকারী প্রকৌশলীকে তাঁর কার্যালয়ে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার ‘নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে’ তাঁর কক্ষে কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী এ হামলা চালান এবং বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন বলে মাগুরা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আহত ওই প্রকৌশলী।
তবে মারধরের ঘটনার সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাগুরা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম আতিক উল্লাহ। তাঁর দাবি, শিমুল হোসাইন নামের ওই উপসহকারী প্রকৌশলীকে অনিয়মের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।
গতকাল রাতে শিমুল হোসাইন মাগুরা সদর থানায় করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তিনি (শিমুল) দুই বছর ধরে মাগুরা সড়ক ও জনপথ বিভাগে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। গতকাল দুপুরে তিনি নিজ কার্যালয়ে কাজ করছিলেন। হঠাৎ সড়ক বিভাগের মাস্টাররোলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা মো. আবদুল আজীজ, মো. মমিন, মো. ফরহাদ হোসেন, মো. ফিরোজ হোসেনসহ কয়েকজন তাঁর কক্ষে এসে তাঁকে গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁকে মারধর করে টেনেহিঁচড়ে নির্বাহী প্রকৌশলী আতিক উল্লাহর কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে তাঁকে বিবস্ত্র করে নানা রকম হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী নিজের মুঠোফোনে তাঁকে (শিমুল) বিবস্ত্র করার ভিডিও ধারণ করেন। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে গেলে তাঁকে অন্য সহকর্মীরা মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী আতিক উল্লাহ আজ সোমবার বলেন, ‘রোববার আমার কক্ষে তাকে (শিমুল) মারধর বা বিবস্ত্র করার অভিযোগ মিথ্যা। সে সময় আমার কক্ষে অনেকেই উপস্থিত ছিল। সে অন্য কর্মচারীদের ভুল বুঝিয়ে একটি অভিযোগে স্বাক্ষর নিয়েছিল। সে বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছিল।’
নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ জুলাই দায়িত্ব নিয়ে মাগুরায় আসেন আতিক উল্লাহ। গত ১ আগস্ট উপসহকারী শিমুল হোসাইনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন তিনি। সেখানে অভিযোগ করা হয়, শিমুল হোসাইন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ওই দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় নথি বাইরে (সদ্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলীকে) পাঠিয়েছেন। এটা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮–এর পরিপন্থী। তিন দিনের মধ্যে শিমুলকে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।
সড়ক বিভাগে কর্মরত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২ অক্টোবর নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে কর্মবিরতি পালন করেন শিমুল হোসাইনসহ ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। কর্মস্থলে নির্বাহী প্রকৌশলী সবার সঙ্গে অসদাচরণ ও গালিগালাজ করেন, এমন অভিযোগ করেন তাঁরা।
নির্বাহী প্রকৌশলী আতিক উল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, উপসহকারী প্রকৌশলী শিমুল অনেককে ভুল বুঝিয়ে ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করান। তাঁদের অনেকেই বিষয়টি উপলব্ধি করে গতকাল তাঁকে (শিমুল) এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হতে পারে। তবে তাঁর কক্ষে ওই উপসহকারী প্রকৌশলীকে কেউ মারধর করেননি।
আজ বেলা ১১টায় মাগুরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যালয়ে গিয়ে কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। উপস্থিত কয়েকজন কর্মচারীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা এড়িয়ে যান। মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশীষ কর্মকার বলেন, গতকাল রাতে সড়ক বিভাগের এক প্রকৌশলী একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।