পড়ে আছে আড়াই কোটি টাকার ভবন 

নান্দাইল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এত বড় একটা ভবন তদারক করার মতো লোকবল তাঁর হাতে নেই।

নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের তিনতলা ভবনটি অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। গতকাল নান্দাইল শহরের পুরাতন মাছমহালে
ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধনের প্রায় চার বছর হতে চলেছে। তিনতলা ভবনটি এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে না। চার বছর ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় ভবনটি ক্রমেই জৌলুশ হারাচ্ছে। ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে থাকছে। অথচ পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেই কারও। ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানোর জন্য নিচতলায় যে দোকানগুলো করা হয়েছিল, সেগুলোও বন্ধ থাকছে। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারাও ভবনটি ব্যবহার করতে না পেরে ক্ষোভ জানিয়েছেন।

নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, সারা দেশের মতো নান্দাইলেও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় কমিটি নেই। ইউএনও হিসেবে তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দায়িত্বে রয়েছেন। তবে এত বড় একটা ভবন তদারক করার মতো লোকবল তাঁর হাতে নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হয়েছিল ২০১৪ সালে। তিন বছর পরপর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও আট বছর ধরে কোনো নির্বাচন হয় না।

প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নান্দাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০১৬ সালে নান্দাইল পৌর শহরের পুরাতন মাছমহালে এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর ময়মনসিংহের জনসভায় যোগ দিতে এসে ভবনটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে ভবনটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির নিচতলা ও দোতলা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ, শৌচাগারও ব্যবহারের অনুপযোগী। দেখে বোঝা যায় না ভবনটি নতুন। প্রতিটি তলায় ধুলা জমে রয়েছে। নিচতলায় থাকা দোকানগুলোর শাটার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।

নান্দাইলের কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্রে জমি নির্ধারণ ও ভবন নির্মাণ করার সময় তাঁদের মনে একধরনের উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা মনে করেছিলেন, নিজস্ব ভবন হওয়ার পর তাঁরা এখানে নিয়মিত বসতে পারবেন। প্রতিদিন একে অপরের দেখাসাক্ষাৎ হবে। গ্রাম থেকে সদরে আসার পর অন্ততপক্ষে বসার মতো একটা স্থান পাওয়া যাবে। কিন্তু নির্মাণের পর ভবনটি সেভাবে কাজে লাগানো হয়নি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাজহারুল হক ফকির বলেন, সাবেক কমান্ডার হিসেবে তিনি ওই ভবনের একটি কক্ষে মাঝেমধ্যে বসেন। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো কমিটি নেই। তাই ভবনটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পদচারণ নেই বললেই চলে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক সদস্য মো. মকবুল হোসেন বলেন, ভবনে থাকা দোকানগুলোর ভাড়ার আয় থেকে আপ্যায়ন খরচ, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ব্যয়, বিদ্যুৎ বিলসহ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দৈনন্দিন ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটানোর কথা ছিল। কিন্তু দোকানগুলো চালু করা যায়নি। আপাতত গুদাম হিসেবে সেগুলো ভাড়া দেওয়া থাকলেও ওই ভাড়া থেকে বেশি আয় হচ্ছে না। ভবনটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রধান সড়কের পাশে হলেও দোকানগুলো সড়ক থেকে দেখা যায় না। তাই ব্যবসা না চলার কারণে দোকানগুলো বন্ধ পড়ে থাকে। অবকাঠামোর কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে দোকানগুলো সড়কমুখী করা হলে উচ্চমূল্যে ভাড়া দেওয়া যাবে। এ ছাড়া দোতলায় অফিস করে ভাড়া দেওয়া সম্ভব। এতে আয় বাড়বে। তিনতলায় থাকবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যালয় ও সম্মেলনকক্ষ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও মোহাম্মদ আবুল মনসুর বলেন, কমিটি থাকলে ভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পদচারণ থাকত। দোকানভাড়া বৃদ্ধি করে আয় বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।