উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আবার আগুন, দুই শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই
কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের তানজিমারখোলা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৩) আবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে আশ্রয়শিবিরের ডি-৩ ব্লকের কাঁঠালতলী বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত দুই শতাধিক রোহিঙ্গার ঘর পুড়ে গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করেছেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আমির জাফর বলেন, বেলা একটার দিকে আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৩) কাঁঠালতলী বাজারে আকস্মিক আগুন জ্বলে ওঠে। এ সময় সাধারণ রোহিঙ্গারা হইচই ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। মুহূর্তেই আগুন কাঁঠালতলী বাজারসহ আশপাশের রোহিঙ্গা বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে। এপিবিএন পুলিশ তাৎক্ষণিক উখিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি জানায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। বেলা পৌনে তিনটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে এপিবিএন কর্মকর্তা বলেন, বেলা ২টা পর্যন্ত দুই শতাধিক রোহিঙ্গার ঘর ও দোকানপাট পুড়ে গেছে। দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে পারে।
২৪ মে একই আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিন শতাধিক রোহিঙ্গার ঘর পুড়ে ছাই হয়। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার এবং মাদক চোরাচালানকে ঘিরে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। আশ্রয়শিবিরের পরিবেশ-পরিস্থিতি অশান্ত করতে সশস্ত্র গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দিচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে একই আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। সঙ্গে ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন; শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, এপিবিএন–এর প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা প্রমুখ। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সশস্ত্র গোষ্ঠী দমনে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গতকাল রাত থেকে মিয়ানমারের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এপিবিএন সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। সন্ত্রাসীরা এপিবিএনের একজন সদস্যের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় আশ্রয়শিবিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে ওই গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা দিনদুপুরে আশ্রয়শিবিরে আগুন দিয়েছে। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। আশ্রয়শিবিরগুলোর নিরাপত্তা দিচ্ছেন এপিবিএনের পৃথক ৩টি ব্যাটালিয়নের ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি সদস্য। কিন্তু ঘনবসতির আশ্রয়শিবির হওয়ায় আগুন লাগলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।