২৩ দিন পর নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ, আতঙ্ক কমেনি স্থানীয়দের
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির (এএ) টানা ২৩ দিন ধরে তুমুল লড়াই চলছে। মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর হেলিকপ্টার ও ফাইটার জেট থেকে ছোড়া গুলি ও একাধিক মর্টার শেল সীমান্তের এপারে বাংলাদেশ ভূখণ্ডেও পড়েছে। ফলে আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল না স্থানীয় বাসিন্দারা। এর মধ্যে আজ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির কোনো শব্দ আসেনি। আকাশেও দেখা যায়নি ফাইটার জেটের ওড়াউড়ি।
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে গোলাবর্ষণের পর গতকাল পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সীমান্তের ঘটনায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে রোববার তলব করা হবে। এ ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানানো হবে। আজ বিকেলে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আসেন মিয়ানমার রাষ্ট্রদূত অং কিও মোয়ে। সেখানে গতকালের ঘটনার জন্য রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনু বিভাগের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির।
হঠাৎ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তৎপরতা সীমিতকরণের নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলছেন সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এর মধ্যে রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদ, মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড বাহিনীর (বিজিপি) বন্দী সদস্যদের উদ্ধারে অগ্রগতি এবং যুদ্ধের স্থান পরিবর্তন।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, হঠাৎ গোলাগুলি বন্ধের ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হলেও মিয়ানমারের মতলব বোঝা কঠিন।
নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দারা বলছেন, গত ২৩ দিন নানাভাবে চেষ্টা করেও আরাকান আর্মিকে দমন করতে পারেনি মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু হঠাৎ গুলিবর্ষণ বন্ধ করায় সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন এখনো পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারছেন না। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় কাউকে সীমান্তের দিকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ৪০ ও ৪১ নম্বর সীমান্ত পিলারের কাছাকাছি বাংলাদেশিদের রাবারবাগানে কর্মরত দুই হাজারের বেশি শ্রমিককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে।
আতঙ্কে শূন্যরেখার ৪ হাজার রোহিঙ্গা
ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু বাজারের কোনারপাড়া এবং মিয়ানমারের ‘খা মং সেক’ পাহাড়ের মাঝখানের জায়গাটুকু ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’। এখানে (শূন্যরেখা) আশ্রয়শিবির গড়ে তুলে পাঁচ বছর ধরে বাস করছে রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত ৬২১টি পরিবারের ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। স্থলযুদ্ধের পাশাপাশি আকাশ থেকে ছোড়া গুলি, মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় আতঙ্কিত তারা।
শূন্যরেখার আশ্রয়শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ (৫০) প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে দুই পক্ষের গোলাগুলি এবং আকাশে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি, মর্টার শেল ও বোমা নিক্ষেপ করা হতো। তবে আজ রোববার সকাল থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ কানে আসেনি। আকাশেও ফাইটার জেট ও হেলিকপ্টার দেখা যায়নি। হঠাৎ মিয়ানমারের চুপচাপ থাকার লক্ষণ ভালো দেখাচ্ছে না। হয়তো আরও বেশি শক্তি বাড়িয়ে আরকান আর্মিকে দমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। নতুবা অন্য কোনো যুদ্ধে অংশ নিতে এপারের সৈন্যদের সেদিকে পাঠানো হতে পারে।
দিল মোহাম্মদ টানা ১০ বছর মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সদস্য ছিলেন। তাঁর বাড়ি রাখাইন রাজ্যের মেদি পাড়ায়। তিনি বলেন, আশ্রয়শিবিরের ৪ হাজার ২০০ রোহিঙ্গাকে ১৫ দিন পরপর খাদ্যসহায়তা দেয় আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি—আইসিআরসি। আগামীকাল মঙ্গলবার ত্রাণ সরবরাহের তারিখ। পুনরায় গোলাগুলি শুরু হলে ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।