চট্টগ্রামের সাত আসনে তৎপর ‘কিংস পার্টি’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রামের সাত আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ‘কিংস পার্টি’ নামে পরিচিত রাজনৈতিক দলগুলো তৎপর রয়েছে। নগরের চার আসন এবং হাটহাজারী, পটিয়া ও ফটিকছড়ি ঘিরেই দলগুলোর নির্বাচনী প্রস্তুতি।
এই কিংস পার্টি হলো তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’। এ ছাড়া ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম’ নামে বিএনপির সাবেক নেতাদের নতুন দলটি নিবন্ধিত না হওয়ায় তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচনে থাকতে চায় দলটি।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ একাধিক দল এখনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে রাজনীতির মাঠে কম পরিচিত এসব দল হঠাৎ করে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে, এসব দলের পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে।
আবার এসব দল নিয়ে চট্টগ্রামে আলোচনা তুলনামূলকভাবে বেশি। কেননা বিএসপি, বিএনএফ ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের প্রধানদের বাড়ি চট্টগ্রামে। তাঁরা তিনজনই চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ দুই আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
হঠাৎ করে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাড়িও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁকে হাটহাজারীতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে উপজেলা বিএনপি।
গত বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এই নতুন জোট। চট্টগ্রামের অন্তত ১০টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে এই জোট।
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাটহাজারীসহ দেশের যেকোনো আসন থেকে নির্বাচন করতে পারি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসনে ৯ থেকে ১০ জন নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছেন।’
চট্টগ্রাম জেলায় মোট ১৬টি সংসদীয় আসন রয়েছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৬টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। জোটের শরিক হিসেবে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনকে এবং চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) জাসদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আর চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ১১টি, বিএনপি-জামায়াত জোট ৪টি ও এলডিপি ১টি আসনে জয়লাভ করেছিল।
এবার সব আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়া হবে, নাকি জোটের শরিকদের কাছে কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি আওয়ামী লীগ। আজ শনিবার দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করার কথা রয়েছে। নির্বাচনী কৌশল হিসেবে জাতীয় পার্টির পাশাপাশি কিংস পার্টির প্রার্থীদেরও কয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।
কিংস পার্টিখ্যাত এসব দল থেকে বিএনপির বর্তমান ও সাবেক নেতাদের কেউ কেউ আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আলোচনা রয়েছে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দিন গত অক্টোবরে নতুন দল গঠন করেছেন। তাঁর সময়ের চাকসু জিএস আজিম উদ্দিনকে নিয়ে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরাম নামে দল গঠন করেছেন।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক ফোরামের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তিনি গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের নতুন দল নিবন্ধন পায়নি। তাই তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচন করবেন। আর চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে আটটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। প্রার্থীদের সবাই বিএনপি, ছাত্রদল ও চাকসুর সাবেক নেতা।
চট্টগ্রাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনএফের সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতবিহীন ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ (গুলশান-বারিধারা) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ আল মাইজভান্ডারী প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামের ১৬টি আসনসহ দেশের সব আসনে প্রার্থী দিয়েছেন তাঁরা। তিনি নিজেও চট্টগ্রাম-২ ও চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসন থেকে নির্বাচন করবেন। দলটির আরেক প্রার্থী ওমর ফারুক মনোনয়নপত্র নিয়েছেন চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) থেকে।
সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান বিএনএমের মহাসচিব মো. শাহজাহান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামের জন্যও তাঁদের চিন্তা ও প্রস্তুতি অভিন্ন। সে জন্য কাজ করছেন।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং, খুলশী) আসনের জন্য ফরম সংগ্রহ করেছেন তৃণমূল বিএনপির মো. ফেরদাউস বশির।