লাকসামে ‘কৌশলে পাতানো’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়া অন্যরা মাঠে নেই
কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১০ বছর পর কাল বুধবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন ভোটাররা। মনোহরগঞ্জে দুজন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া গেলেও লাকসামের নির্বাচনটি ‘কৌশলে পাতানো’ হতে যাচ্ছে বলে স্থানীয় মানুষের ধারণা। এ দুই উপজেলা নিয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের নির্বাচনী এলাকা কুমিল্লা-৯।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি লাকসাম উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ৬১টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৯টির ফলাফলে বিএনপির প্রার্থী আবদুর রহমান বাদল ৭৪০ ভোটে এগিয়ে ছিলেন। পরে একই বছরের ১০ মার্চ স্থগিত দুই কেন্দ্রের ভোট হয় অনেকটা জবরদস্তি করে। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ইউনুস ভূঁইয়া জয়ী হন। ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের নির্বাচনে এই উপজেলায় আওয়ামী লীগ–মনোনীত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। আগামীকালের নির্বাচনে লাকসামে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিনজন। তাঁরা হলেন লাকসাম উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইউনুস ভূঁইয়া, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি শম্ভু সাহা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি-রব) সাধারণ সম্পাদক বিকাশ চন্দ্র সাহা। ইউনুস ভূঁইয়া এ নিয়ে টানা তিনবার প্রার্থী হয়েছেন।
স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শম্ভু সাহা মূলত ডামি প্রার্থী। স্থানীয় রাজনীতিতে তিনি মো. ইউনুস ভূঁইয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শম্ভু সাহা ও বিকাশ চন্দ্র সাহার কোনো প্রচারণা এলাকায় নেই। গতকাল সোমবার প্রচারণার শেষ দিনেও তাঁদের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও একজন করে ঠিক করা আছে। অপর প্রার্থীরা ডামি। তাঁদের কোনো প্রচারণা নেই।
শম্ভু সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি প্রার্থী হয়েছি, এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’ আর বিকাশ চন্দ্র সাহা দাবি করেন, তিনি পোস্টার কম ছাপিয়েছেন, কিন্তু ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।
লাকসাম বাজারের তিনজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এবার ভোটের ধরন পরিবর্তন করা হয়েছে। আসলে সবাই ডামি প্রার্থী। মন্ত্রীর নির্দিষ্ট প্রার্থীরাই জিতবেন।
নির্বাচনের প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচন সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। সবাই তো জেতার জন্যই প্রার্থী হয়েছেন।
মনোহরগঞ্জে মান্নানের পক্ষে তৎপরতা
মনোহরগঞ্জে ভোটের মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের দুই নেতার মধ্যে। তাঁরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও নাথেরপেটুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান চৌধুরী। তাঁদের সঙ্গে ভোটের মাঠে আসা আরেক প্রার্থী হলেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা মহিলা লীগের সদস্য আফরোজা কুসুম। তাঁদের মধ্যে মান্নানের পক্ষে মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা মাঠে তৎপর।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও লাকসাম পৌরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা (চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, সদস্য, মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর) জয়ী হন। এবার এই উপজেলায় ১০ বছর পরে স্থানীয় সরকারের ভোট হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন চান। সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি জয়ী হবেন বলে বিশ্বাস করেন।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে আমার কোনো প্রার্থী নেই। যারা কাজের মাধ্যমে জনগণের মন জয় করেছে, তারা ভালো করবে।’