ভৈরবে যুবলীগ নেতার বাড়ি থেকে বিএনপির দুই নেতা ‘আটক’, হরতালের ডাক

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম, ভৈরব উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. নুরুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক যুবলীগ নেতার বাড়ি থেকে ডিবি (গোয়েন্দা পুলিশ) পরিচয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উপসাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ অঞ্চল) ও জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমসহ তিনজনকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ভৈরব থানার পুলিশ ও কিশোরগঞ্জ ডিবি পুলিশ বলছে, তাদের কাছে আটকের কোনো তথ্য নেই।

এ ঘটনার প্রতিবাদে কাল রোববার ভৈরবে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে বিএনপি। আজ শনিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলা ও পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানানো হয়।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সাদাপোশাকে এসে আজ ভোরে পৌর শহরের কমলপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম ওরফে মাজহারুল ইসলামের বাসা থেকে তিনজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে রাত একটার দিকে ভৈরব রেলস্টেশন এলাকা থেকে আরেকজন আটক হন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শরিফুল আলমের পাশাপাশি ‘আটক’ অন্য নেতারা হলেন ভৈরব উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নুরুজ্জামান ও সাইফুল ইসলাম এবং বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম। সাইফুল ইসলামকে রাত একটার দিকে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে আটক করা হয়। তিনি ট্রেনে করে ঢাকা থেকে ভৈরব আসার পর আটক হন। শফিকুল ইসলাম ইতালিতে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

তিন বিএনপি নেতাকে ‘আটকের’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। আজ শনিবার ভৈরবের গজারিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

শরিফুল আলমের বাড়ি জেলার কুলিয়ারচর উপজেলায়। তিনি ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে বিএনপির টিকিটে তিনবার সংসদ নির্বাচন করেন। তবে জয় পাননি। গত ৩১ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা তিন মামলার দুটিতেই তিনি আসামি।

ভৈরব পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মামলা আর গ্রেপ্তার করে তাঁদের আন্দোলনকে থামিয়ে দিতে চাইছে সরকারের মদদপুষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এভাবে দেশ চলতে পারে না। প্রতিবাদ–প্রতিরোধ করা না গেলে দেশের গণতন্ত্র চিরতরে কবরবাসী হবে। আগামীকালের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি সফল করার জন্য তিনি দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ রাখেন।

আরও পড়ুন

শফিকুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি ইতালিপ্রবাসী। সেখানে তিনি মনফালকনে গরিঝিয়া যুবলীগ শাখার আহ্বায়ক। তাঁর বাড়ি ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের আগানগর গ্রামে। তিনি দুই বছর আগে কমলপুর এলাকায় সাততলা ভবন নির্মাণ করেন। তিনি বর্তমানে নিজের ভবনে বসবাস করছেন। বিএনপি নেতা নুরুজ্জামান তাঁর মামাশ্বশুর। নুরুজ্জামানও একই এলাকার বাসিন্দা। নুরুজ্জামান গতকাল রাতে শফিকুল ইসলামের স্ত্রী সানজিদা সুলতানাকে ফোন করে জানান, তিনি রাতে থাকবেন। পরে কয়েকজনকে নিয়ে ভবনের সাততলার একটি কক্ষে তাঁরা রাত যাপন করেন। ফজরের আজানের সময় দুই গাড়িতে সাদাপোশাকধারী লোকজন আসেন। তাঁরা নিজেদের ডিবি পরিচয় দেন। পরে সাততলার একটি কক্ষ থেকে তাঁদের আটক করে নিয়ে যায়। তাঁর ফোনটিও নিয়ে যায়।

আজ এমএন টাওয়ারে গিয়ে কথা হয় সানজিদা সুলতানার সঙ্গে। তিনি বলেন, নুরুজ্জামান তাঁর আপন মামা। মামা তাঁর বাসায় থাকতে চেয়েছেন। ভাগনি হিসেবে ‘না’ বলার সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি সঙ্গে আর কাউকে নিয়ে আসবেন—এমনটা ধারণায় ছিল না। এমনকি তাঁর সঙ্গে কারা আছেন, সে তথ্যও জানা ছিল না। তাঁর স্বামীও এসব জানতেন না।

সানজিদা সুলতানা বলেন, সাদাপোশাকে আসা ব্যক্তিরা তাঁদের সঙ্গে মন্দ আচরণ করেননি। কিন্তু যাওয়ার সময় পরিবারের সবার মুঠোফোন নিয়ে যান।

ভৈরব উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। এত অন্যায় সহ্য করার মতো নয়। সুতরাং আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের পুলিশকে রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হবে। আগামীকালের হরতাল এমন ভাবনা থেকে দেওয়া হয়েছে।’

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, ভোরে ভৈরবে ডিবি পুলিশের কোনো অভিযানের কথা তাঁর জানা নেই। এমনকি কোনো বাসা থেকে কাউকে আটক করার কথাও তিনি শোনেননি।

কিশোরগঞ্জ জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল বাসার ভৈরবের কোনো অভিযানের কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন।

আরও পড়ুন