ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিংতার ঘটনা উসকানিমূলক ছিল কি না, তা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এখন আমাদের দেশ গড়ার সময়। এ সময়ে নিজেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে সেটা কারও জন্যই শুভ হবে না।’
আজ সোমবার দুপুরে ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৫৫তম পরিচালনা বোর্ডের সভা শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। রোববার রাতে ঢাকায় এত বড় সহিংতার প্রয়োজন ছিল কি না বা ঘটনাটি মীমাংসার সুযোগ ছিল কি না, তা–ও তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থী সমাজের ওপর আমরা অনেক বড় একটা ভরসা রাখি। দেশে যে ফ্যাসিজম চলে গেল এবং গণতন্ত্রের পথের যাত্রার সুযোগ তৈরি হলো, এই জন্য শিক্ষার্থীদের আমরা সব সময় অভিবাদন জানাই। তারা যেন এই জিনিসটাই তাদের মনোজগতে রাখেন। গণতন্ত্রে যাওয়ার পথ এমনতিইে খুব কঠিন। তারপর আমরা যখন যাত্রাটা শুরু করলাম, তখন কোনো আচরণের কারণে সেটা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।’
ভারতের অরুণাচলের সিয়াং নদী ও চীনের তিব্বত মালভূমির পূর্ব দিকে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগের প্রসঙ্গে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, চীনের যে পরিকল্পনা, সেটা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। এটা হলো বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবেই চীনকে জানানো হয়েছে ও প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে চীন জানিয়েছে, তাদের এই প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। আর ভারতের যেখানে বাঁধ নির্মাণের কথা বলা হয়েছে, সেখানে তাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ রয়েছে। দুটি বিষয়েই তাঁরা কাজ করছেন। বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে তারা যেন কাজ করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হবে।
নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট সম্পর্কে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা নদ-নদীর কথা বলি। নদী রক্ষা কমিশনের কথা বলি, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কথা বলি। কিন্তু এত আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট আছে, সেটা সম্পর্কে কেউ কথা বলে না। অথচ তার যে কার্যপরিধি, সেখানে যদি তাকে ঠিকমতো এটা বরাদ্দ দেওয়া হয়, আর সেই বরাদ্দ সঠিকভাবে খরচ করা হয়, তাহলে অনেক ভালো ভালো কাজ আমরা নিজেদের সক্ষমতা দিয়ে করতে পারি। তাই গবেষণার জন্য আগামী বাজাটে পর্যাপ্ত না হলেও বড় বড় কিছু বরাদ্দ আনতে আমরা চেষ্টা করব।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ সচিব মো. নাজমুল হাসান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. ইউসুফ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক তাহমিদুল ইসলাম, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আবু হুরায়রা, পানিসম্পদ উপদেষ্টার একান্ত সচিব আবু নঈম, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা, ফরিদপুর পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল প্রমুখ।
পরে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও গবেষণা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এর আগে সকালে সোয়া ১০টার দিকে তিনি ফরিদপুর শহরের হাড়োকান্দিতে অবস্থিত নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটে এসে পৌঁছান। দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিদর্শন শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে ফরিদপুর ত্যাগ করেন।