চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাড়ছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি

চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্কুলে উপস্থিতি বেড়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। সড়কে গণপরিবহনও তুলনামূলক বেড়েছে। স্বাভাবিক হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ।

নগরের সিডিএ অ্যাভিনিউ এলাকায় অবস্থিত নাছিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুই পালায় প্রায় আড়াই শ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়ছে। সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভের মুখে গত ১৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল–কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওই সময় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৭ জুলাই থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা জানানো হয় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও শুরুতে উপস্থিতি খুব একটা ছিল না। কোনো কোনো স্কুলে একজন শিক্ষার্থীও উপস্থিত হয়নি। সড়কে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরা গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে জানান, সবকিছু স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না। নিরাপত্তা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। তবে গতকাল পাঁচ অভিভাবক জানান, সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে এখনো কিছুটা শঙ্কা রয়েছে, তবে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। থানাগুলো সচল হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতও স্বাভাবিক হচ্ছে। এ কারণে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

নগরের কলেজিয়েট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ৫ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থী আছে। সকালের পালায় শিক্ষার্থী ১ হাজার ৩৪ জন। স্বাভাবিক সময়ে ৭০০ থেকে ৮০০ জন পর্যন্ত নিয়মিত উপস্থিত থাকে। গতকাল উপস্থিত ছিল ৮৪ জন। এর আগে উপস্থিতি আরও কম ছিল।

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়েও দুই পালায় শ্রেণি কার্যক্রম হয়। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আরিফ উল হাছান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুই পালায় শিক্ষার্থী প্রায় সাত হাজার। সকালের পালা শুরু হয় সকাল ৭টায়, দুপুরের পালা ১২টায়। গত সপ্তাহের চেয়ে গতকাল উপস্থিতি কিছুটা বেড়েছে।

এদিকে কলেজগুলোতেও উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী আছে প্রায় তিন হাজার। গতকাল পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রম চলেছে বলে জানান কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শাখায় উপস্থিতি ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ, তবে মানবিকে কিছুটা কম। আশা করা যাচ্ছে, আজ বুধবার উপস্থিতি আরও বাড়বে। একইভাবে চট্টগ্রাম কলেজেও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকেরা। কলেজের উপাধ্যক্ষ সুব্রত বিকাশ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের কলেজেও শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। ৭০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি ছিল গতকাল।

দুশ্চিন্তায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

গত ৩০ জুন সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার কারণে ১৮, ২১, ২৩, ২৫, ২৮ জুলাই এবং ১ ও ৪ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সর্বশেষ ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। পরে তা-ও স্থগিত করা হয়েছে।

এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন-সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তি গত রোববার ছড়িয়ে পড়ে। তবে গত সোমবার বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক কমিটি জানিয়েছে, বিজ্ঞপ্তিটি ঠিক নয়। বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি জানায়, এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার সিলেবাস ও মানবণ্টন অনুযায়ী এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষা আটকে থাকায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচ শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা কবে হবে, তা এখনো জানানো হয়নি। এ কারণে কিছুটা দুশ্চিন্তা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষার কার্যক্রম শেষ করা উচিত।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চট্টগ্রামের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষা কবে হবে, সে বিষয়ে আন্তশিক্ষা সমন্বয়ক কমিটি এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে আলোচনা চলছে। তারিখ নির্ধারিত হলে জানানো হবে।