হবিগঞ্জ সীমান্তে মারা যাওয়া বাংলাদেশির লাশ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বড় কেয়ারা সীমান্ত এলাকায় নিহত জহুর আলীর (৫৫) লাশ হস্তান্তর করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিএসএফ ও সীমান্তের ওপারের ভারতীয় লোকজন জহুর আলীকে পিটিয়ে হত্যা করে। তবে বিএসএফ দাবি করেছে, পিটিয়ে নয়, বরং হৃৎক্রিয়া ও নিউমোনিয়াজনিত কারণে তাঁদের ভৌগোলিক সীমানায় ওই ব্যক্তি মারা যান। পরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায় ভারতীয় পুলিশ।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নিহত জহুর আলী চুনারুঘাট উপজেলার পশ্চিম ডুলনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিরাপত্তাপ্রহরী হিসেবে চাকরি করতেন। পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে ৫ জানুয়ারি তিনি বাড়িতে আসেন। ঢাকা থেকে আসার সময় গ্রামের হাটবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে অল্প মূল্যে কিছু লুঙ্গি কিনে নিয়ে আসেন জহুর আলী। সেগুলো নিয়ে তিনি গত সোমবার বাড়ি থেকে বের হন। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন গত মঙ্গলবার সকালে চুনারুঘাটের বড় কেয়ারা সীমান্তের লোকজন ভারতীয় সীমান্তের গৌরনগর এলাকায় এক ব্যক্তির লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় সীমান্ত এলাকায় প্রচার হয়, নিহত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক। তখন স্থানীয় বাংলাদেশিরা ওই লাশ শনাক্তের চেষ্টা করেন। এদিকে ভারতীয় লোকজন লাশটির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করলে বাংলাদেশের অনেকেই ছবি দেখে জহুর আলীকে শনাক্ত করেন। তবে তিনি ভারতে গেলেন কীভাবে, তা নিয়ে এলাকায় আলোচনার সৃষ্টি হয়।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, বিএসএফ ও ওই এলাকার কিছু মানুষ জহুর আলীকে সীমান্ত এলাকা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে তাঁরা লাশ টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। ভারতীয় লোকজন তাঁদের এ ঘটনা জানান।
বিজিবির হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়ন জানায়, জহুর আলী তাদের আওতাধীন গুইবিল বিওপির মানিকভান্ডার এলাকার মেইন পিলার ১৯৬৮/এম-এর কাছ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সোমবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে স্থানীয় লোকজন খোয়াই থানার গৌরনগর এলাকায় রাস্তার পাশে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন। ভারতের খোয়াই থানা থেকে একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে খোয়াই জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ নিয়ে মঙ্গলবার ‘ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এদিকে ঘটনার তিন দিন পর আজ বিকেল পাঁচটায় দুই দেশের শূন্যরেখায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিহত জহুর আলীর লাশ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। লাশ হস্তান্তরকালে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তারা লাশের ময়নাতদন্ত শেষে প্রতিবেদন পেয়েছে জহুর আলী হৃৎক্রিয়া ও নিউমোনিয়াজনিত কারণে মারা গেছেন। এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন তারা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছে। এ সময় ভারতের পক্ষে ত্রিপুরা পুলিশের সাবডিভিশনাল কর্মকর্তা রঙ্গ দুলাল দেব বর্মা, খোয়াই পুলিশের কর্মকর্তা সুবল মালাকার, বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার কুন্দন কুমার এবং বাংলাদেশের পক্ষে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুর রহমান, বিজিবির বাল্লা সীমান্ত ক্যাম্পের কমান্ডার নাজমুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ও নিহতের ছেলে অলি মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর আলম বলেন, আজ বিকেল পাঁচটায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ লাশ হস্তান্তর করে। পরে পুলিশ জহুর আলীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।