বেগুনি বেগমের দোকানে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৩০ হাজার টাকার পিঠা
আটটি চুলায় দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। প্রতিটি চুলায় গরম তেলে ভাজা হচ্ছে হরেক রকমের বাহারি পিঠা। শীতের পড়ন্ত বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে পিঠা তৈরির মহাযজ্ঞ। বেগুনি বেগমের (৪৮) সঙ্গে কাজ করেন আটজন কারিগর। তাঁদের দম ফেলানোর ফুরসত মেলে না। বগুড়া শহরের শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ফটকে এই পিঠার দোকান।
এই দোকানে কুশলি ঝাল ও মিঠা, নারকেলি, চিতই, তেল পিঠা, ভাপা পিঠা, ডিম পিঠা ও ঝাল পিঠা বিক্রি হয়। বাহারি ও মজাদার এই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে প্রতিদিন বেগুনি বেগমের দোকানে ভিড় করেন ক্রেতারা। তিনি জানান, পিঠা তৈরিতে প্রতিদিন প্রায় ১৮ কেজি সয়াবিন তেল ও ৪০ কেজি আটা লাগে। পিঠাভেদে প্রতিটির দাম ১০ থেকে ৩০ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি বেচাকেনা হয়। সেই হিসাবে প্রতি মাসে ৯ লাখ টাকার পিঠা বিক্রি করেন তিনি। মজুরি ও খরচ বাদে বেশ ভালো লাভ থাকে। শীত মৌসুমে গড়ে চার মাস পিঠার এ ব্যবসা চলে।
প্রায় ৩০ বছর ধরে বগুড়া শহরের খান্দার কারমাইকেল সড়কে পিঠা বিক্রি করছেন বেগুনি বেগম। এ কাজে তাঁকে সহায়তা করে স্বামী ইদ্রিস আলী। বছরের অন্য সময় বাড়ির পাশে চা বিক্রি করেন এই দম্পতি।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ফটকে গিয়ে দেখা যায়, রীতিমতো পিঠা তৈরির মহোৎসব শুরু হয়েছে। চারকলের খড়িতে জ্বলছে আটটি চুলা। প্রতিটি চুলায় কড়াইয়ের ফুটন্ত তেল। কারিগরেরা কড়াইয়ের গরম তেলে হরেক স্বাদের পিঠা ভাজছেন। ভ্রাম্যমাণ দোকানের তিন পাশে রকমারি পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। কেউ বেঞ্চে বসে, আবার কেউবা দাঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাড়িতে হরেক পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন।
শহরের জহুরুলনগর থেকে বেগুনি বেগমের পিঠা খেতে এসেছেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন শীতের সন্ধ্যায় বেগুনি খালার পিঠার স্বাদ নিতে এখানে ছুটে আসি। কোনো কোনো দিন পিঠার জন্য সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তেল পিঠা, চিতই পিঠা ছাড়াও এই দোকানে সবচেয়ে মজাদার হচ্ছে ডিম পিঠা।’
বেগুনি বেগম বলেন, প্রতিবছর কার্তিক থেকে মাঘ পর্যন্ত চার মাস এ পিঠার ব্যবসা হয়। বেলা ৩টা থেকে দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ক্রেতারা ভিড় করেন এখানে। ভাপা পিঠা প্রতিপি ১০ টাকা, চিতই ১০, তেল পিঠা ২০ টাকা, ঝাল পিঠা ১৫ টাকা ও কুশলি প্রতি পিস ১০ টাকা এবং ডিম পিঠা ৩০ টাকা দামে বিক্রি করা হয়।
প্রায় ৩০ বছর পিঠার ব্যবসা করেন বেগুনি বেগম। আগের দিনে কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘পিঠা ভাজতে ভাজতে চেংরা বয়স থ্যাকে এখন বুড়ি হয়্যা গেচি। ম্যালা দিন থ্যাকি পিঠা ভাজাচ্চি। সগলি কয়, হামার দোকানের পিঠার স্বাদ সেরা। পিঠার ব্যবসায় চারডা ছল মানুষ করিচি। শীতের চার মাস পিঠার ব্যবসা হয়। বছরের বাকি সময় চা বেচে সংসার চালায়।’
বেগুনি বেগমের স্বামী ইদ্রিস ব্যাপারী বলেন, পিঠা তৈরিতে প্রতিদিন ১৮ কেজি সয়াবিন তেল ও ৪০ কেজি আটা লাগে। আটজন কারিগর পিঠা ভাজার কাজ করেন। মাথাপিছু তাঁদের মজুরি ৩০০ টাকা।