শেখ হাসিনার সন্ধান চেয়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি

শেখ হাসিনার সন্ধান চেয়ে দানবাক্সে চিরকুট ফেলেন বেনামী এক ব্যক্তিছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে ২৮ বস্তা টাকার পাশাপাশি প্রায় এক বস্তা চিঠি-চিরকুট পাওয়া গেছে। চিঠিতে কেউ প্রিয় মানুষের ভালোবাসা পেতে, কেউবা নিজের বিয়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন। কেউ নিজের সন্তানের রোগমুক্তি কামনা করেছেন। কেউ আবার পছন্দের দল বা ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় দেখতে চেয়ে পাগলা বাবার কাছে চিঠি লিখেছেন।

৪ মাস ১২ দিন পর আজ পাগলা মসজিদের ১১টি সিন্দুক খোলা হয়। সিন্দুকে মোট ২৮ বস্তা টাকা, এক বস্তা চিরকুট, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে। দিনভর গণনার পর এবার রেকর্ড ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার।

দানের পাশাপাশি মনোবাসনা পূরণে কেউ কেউ সিন্দুকে চিরকুট বা চিঠি ফেলে যান। মানুষের ধারণা, এখানে চিরকুটের মাধ্যমে কিছু চাইলে, সেটাও পাওয়া যাবে। গতবার চিঠির বিষয়টি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এবার বেনামি চিঠির পরিমাণ বেশি ছিল। কিছু চিঠিতে নাম থাকলেও ঠিকানা দেওয়া ছিল কম।

মো. ইমরান নামের এক তরুণ ভালোবাসার মানুষ রাবেয়াকে কাছে পেতে দানবাক্সে একটি চিরকুট রেখে গেছেন। চিঠিতে ইমরান লিখেছেন, ‘ইয়া পাগলা বাবা, আমাদের সালাম গ্রহণ করবেন। আমাদের আরজি কবুল করুন। আমাদের মনের বাসনা আপনি বোঝেন। ইমরান ভালোবাসে রাবেয়া আক্তারকে। রাবেয়ার পরিবার ইমরানকে বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজি না। আপনি রাবেয়াকে এনে দেন।’

বেনামি একজন বিয়ের আকুতি জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমি খুব অসহায়। আমার বিয়ে বারবার ভেঙে যাচ্ছে। আমার পরিবার আমাকে নিয়ে চিন্তিত। চারপাশের মানুষের কটুকথা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুমি জানো আমি নির্দোষ ও নিরপরাধ। আমার বিয়েতে যদি কোনো বাধাবিপত্তি থাকলে তুমি সমাধান করে দাও...তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না।’

আরও পড়ুন

বেনামি আরেকটি চিরকুটে একজন পাগলা বাবার কাছে শেখ হাসিনার সন্ধান চেয়ে জানতে চেয়েছেন, ‘পাগলা চাচা, শেখ হাসিনা কোথায়?’ আরেকজন ‘সাধারণ জনগণ’ নামে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়ে লিখেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই। আল্লাহ তুমি সহজ করে দাও।’

রেহানা সারোয়ার নামের একজন সন্তান কামনা করে চিঠি লিখেছেন। তিনি নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে ১২ বছর চলতাছে। কিন্তু এখনো আমি কোনো সন্তানের মা হতে পারলাম না। অনেক ডাক্তার দেখাইছি, কিন্তু কোনো লাভ হয় নাই। আমি এমন কোনো দিন নাই, এমন কোনো রাত নাই, আমার আল্লাহর কাছে হাত তুলে কাঁদি নাই...আমাকে একটা নেক সন্তানের মা হওয়ার সুযোগ দেন।’

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানসিন্দুকে পাওয়া টাকা গণনার কাজ করছেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ অন্যরা
ছবি: প্রথম আলো

বেনামি আরেকজন চিরকুট দিয়ে ব্যবসায় সফলতা কামনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আল্লাহ তুমি ওষুধের ব্যবসা দিয়ে ব্যাংকে ১১ লাখ টাকা জমা করে দিয়েছেন। আল্লাহ আপনার কাছে আবদার, ২০২৬ সালে যেন ব্যাংকে ২৬ লাখ টাকা জমা হয়ে যায়..।’

মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানায়, এটা নতুন নয়; প্রতিবারই সিন্দুক খোলার সময় অনেক চিঠি বা চিরকুট পাওয়া যায়। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার সংখ্যাটা বেশি। এমনিতে সিন্দুক ঠাসাঠাসি অবস্থায় থাকে। সে জন্য আগের ৯ সিন্দুকের জায়গায় এবার ২টি সিন্দুক বাড়িয়ে ১১টি করা হয়। কিন্তু এসব চিঠির কারণে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় অনেকেই সিন্দুকে টাকা রাখতে পারেন না।

আরও পড়ুন

অহেতুক চিঠির কারণে কর্তৃপক্ষ কিছুটা বিরক্ত। অনেক সময় এসব চিঠির কারণে অনেকেই বিরূপ মন্তব্যসহ হাসিঠাট্টা করে। এ জন্য এবার চিঠি পাওয়ামাত্রই একটি বস্তায় ভরে মুখ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। মসজিদের দানবাক্সে অহেতুক চিঠি না ফেলার আহ্বান করেছেন মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান।

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়া স্বর্ণালংকার দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়।