‘তোমরা যে কম্বলডা দিলা, তা নিইয়া রাইতে আরামে ঘুম পারতে পারমু’

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট অন্তারমোড় বেড়িবাঁধের ঢালুতে আজ বৃহস্পতিবার ১২০জন শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়ছবি: প্রথম আলো

রাতে প্রচণ্ড শীত পড়েছিল। সকালে ছিল কুয়াশা। কুয়াশাভেজা সকালের ঠান্ডায় সবাই বেশি কাবু হয়েছে। এমন বৈরী পরিবেশে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট অন্তারমোড় ও গোয়ালন্দ উপজেলার পূর্ব উজানচর দুটি এতিমখানা, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ ২০০ জন শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও বন্ধুসভার সহযোগিতায় আজ বৃহস্পতিবার এসব কম্বল বিতরণ করা হয়।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার অন্তারমোড় বেড়িবাঁধে কম্বল নিতে আসেন গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের চরবরাট এলাকার তারাবানু বেগম (৭০)। প্রায় ২৫ বছর আগে স্বামী জামাল মণ্ডল মারা গেছেন। সংসারে দুই ছেলে থাকলেও ঠিকমতো খেয়াল রাখেন না। অন্যের সহযোগিতায় কোনোভাবে দিন পার করছেন তিনি। গরম কাপড় না থাকায় শীতে কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। আজ এখানে বিতরণ করা কম্বলটি হাতে পাওয়ার পর আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

তারাবানু বেগম বলেন, ‘বাবারে, দেবগ্রামের বনভাবৈলে বড় বাড়ি, জমি ছিল। নদীভাঙনে সব কইড়া নিইয়া যায়। সেহান থেইক্কা চইলা আসি পানৈর। এহানেও ভাঙলে আবার যাই দেবগ্রাম গ্রামে। শেষমেশ সেহানেও থাকতে পারিনি। পরে বরাট বাজার রাস্তার ধারে আসি। এত টাল (শীত) পড়ছে, কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি, এটা কম্বলও দেয়নি। তোমরাই আমারে পরথম (প্রথম) কম্বল দিলা। আল্লাহর রহমত বলে কম্বলডা পাইছি।’

গোয়ালন্দের দেবগ্রাম থেকে কম্বল নিতে এসেছেন জহুরা খাতুন (৬০)। হাতে কম্বলটি পাওয়ার পর উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘বাপগো, অনেক আগে সুয়ামি (স্বামী) মারা গেছে। একডামাত্র পোলা মানষের বাড়ি কাম করে। কোনোভাবে দিনডা চইলা যায়। গতকাল রাইতেও ম্যালা টাল পড়েছে। টালে ভালো করে ঘুমও হয়নি। তোমরা যে কম্বলডা দিলা, তা নিইয়া রাইতের বেলায় অন্তত আরামে ঘুম পাড়তে পারমু।’

সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের বরাট বাজার এলাকা থেকে এসেছিলেন বৃদ্ধ হাসমত আলী (৮৫)। তিনি বলেন, ‘বাজানরে, আজ কয়েক দিন ধইরা অনেক টাল পড়ছে। রাইতের বেলা অনেক কষ্ট হয়। এ বছর কেউ আমাদের একটি কম্বল দেয়নি। আপনারা প্রথম কম্বল দিলেন। এই কম্বল পাইয়া আমার অনেক উপকার হইলো।’

রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট অন্তারমোড় বেড়িবাঁধের ঢালুতে আজ বৃহস্পতিবার ১২০ জন শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

আজ সকাল ১০টার দিকে গোয়ালন্দ-রাজবাড়ী-হাবাসপুর বেড়িবাঁধসংলগ্ন অন্তারমোড় এলাকায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ও পাচুরিয়া এবং গোয়ালন্দ উপজেলার ছোটভাকলা ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের ১২০ জন শীর্তাত মানুষকে কম্বল দেওয়া হয়। এর আগে রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সদস্যরা চার দিন ঘুরে এসব অঞ্চলের নদীভাঙনের শিকার এবং এলাকার প্রকৃত অসহায় হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণের টোকেন দিয়ে আসেন।

দুপুর ১২টার দিকে গোয়ালন্দ উপজেলার পূর্ব উজানচর হাজী গফুর মণ্ডলপাড়ার হামিদিয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানা, একই এলাকার রাজ্জাকিয়া হাফিজিয়া নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ দৌলতদিয়া এলাকার শীতার্ত মানুষের মধ্যে আরও ৮০টি কম্বল বিতরণ করা হয়।

কম্বল বিতরণের সময় গোয়ালন্দ বন্ধুসভার সভাপতি জীবন চক্রবর্তী, সহসভাপতি মইনুল হক মৃধা, সাধারণ সম্পাদক জারিন সুবহা, বন্ধুসভার সদস্য সাজ্জাদ হোসেন, মুন্সী রেজাউল করিম, রাজবাড়ী বন্ধুসভার বন্ধু আবদুর রহমান, শাহিন রেজা, রানা ইসলাম, হামিদিয়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানার মোহতামিম মো. জহিরুল ইসলাম, সাহাজউদ্দিন মণ্ডল ইনস্টিটিউটের সহকারী শিক্ষক মো. মাসুদ মণ্ডল, আতিয়ার রহমান, প্রথম আলো রাজবাড়ী প্রতিনিধি এম রাশেদুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শীতার্ত মানুষের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টে ২ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স পিএলসি। এই টাকায় কেনা ২০০টি কম্বল আজ রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দে বিতরণ করা হয়েছে।

১৭ ডিসেম্বর থেকে এই পর্যন্ত প্রথম আলোর ত্রাণ তহবিলে ৯ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬৮ টাকা জমা পড়েছে। এর মধ্যে ব্যাংকের মাধ্যমে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং বিকাশের মাধ্যমে এসেছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৬৮ টাকা। এ ছাড়া ইনার হুইল ক্লাব ঢাকা সানফ্লাওয়ার ৬০ হাজার টাকা দিয়েছে।

দরিদ্র মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারেন আপনিও:
সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭২০০০০১১১৯৪
রাউটিং নম্বর: ০৮৫২৬২৫৩৯
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।
অথবা
বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩-০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।
এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপে ডোনেশান অপশনের মাধ্যমেও আপনার অনুদান পাঠাতে পারেন।