বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও গ্রেপ্তার করে আন্দোলন দমন করতে চায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকেও আন্দোলন দমনের জন্য লেলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দমন–পীড়ন করে এই সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, এই সরকার বিচার বিভাগকেও দলীয়করণ করেছে। দুদককে সরকার বিএনপি ও বিরোধীদের দমনের কমিশনে পরিণত করেছে।
আজ বুধবার নগরের সদর রোডে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বেগম সেলিমা রহমান এসব কথা বলেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বে বিভিন্ন দল ও জোট এ কর্মসূচি পালন করে।
আওয়ামী লীগ সরকারকে পতনের জন্য আগামী দিনে আরও কঠোর কর্মসূচি আসবে উল্লেখ করে সেলিমা রহমান বলেন, ‘সবাই প্রস্তুত হোন, সেই কঠোর কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করতে হবে। সরকার চেষ্টা করবে দমন-নিপীড়ন চালিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করতে। কিন্তু বিএনপির নেতা-কর্মীরা সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না।’
১৬ জানুয়ারি সারা দেশে বিএনপির কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়ে সেলিমা রহমান বলেন, ‘সরকারের জুলুম, অত্যাচার, লুটপাট ও বেপরোয়া দুর্নীতিতে বাংলাদেশ আজ অন্ধকার জনপদে পরিণত হয়েছে। এই সরকার অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। আমরা আন্দোলনর মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব।’
নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরাও অংশ নিতে চাই। তবে শর্ত আছে, নির্বাচনের আগে এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, আর ভোট চুরির মেশিন ইভিএম বাদ দিতে হবে। এটা না করলে নির্বাচন তো করবই না আর করতেও দেব না।’
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব মীর জাহিদুল কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত গণ–অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহাবুবুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, এবায়দুল হক চাঁন, আবু নাসের মো. রহমাতুল্লাহ, পিরোজপুর জেলা আহ্বায়ক মো. আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
বিএনপির কর্মসূচির কারণে অশ্বিনী কুমার হল চত্বর ছাপিয়ে ব্যস্ততম সদর রোড পর্যন্ত নেতা–কর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গণ-অবস্থানকে ঘিরে সকাল থেকেই নগরের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের উপস্থিতি। অশ্বিনী কুমার হল–সংলগ্ন এলাকাতেও পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অবস্থান কর্মসূচি ও মিছিল
এদিকে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চ বরিশাল জেলা শাখা আজ সকাল থেকে বরিশাল প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এ সময় নেতারা বলেন, উন্নয়নের ফানুস ফুটো হয়ে গেছে। সরকার নিজেদের লোক দিয়ে এই লুটপাট জারি রেখেছে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে মানুষ যখনই রাস্তায় নামে তখনই ছাত্রলীগ, যুবলীগ দিয়ে হামলা চালানো হয়। সারা দেশে বর্তমানে মানুষের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ দিয়ে গুলি চালাচ্ছে। এক ব্যক্তির আধিপত্য কায়েমে দেশের সমগ্র প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক সোহরাব হোসেন সভাপতিত্বে এ সমাবেশে বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ, গণ অধিকার পরিষদের জেলা সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার সদস্যসচিব আরিফুর রহমান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সমীরন হালদার প্রমুখ।অবস্থান কর্মসূচি শেষে তাঁরা নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।