চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি-হাঁসফাঁস অবস্থা

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। গরমের হাত থেকে স্বস্তি পেতে গভীর নলকূপের পানিতে জলকেলি। শুক্রবার দুপুরে নূরনগর বিএডিসি বীজ উন্নয়ন খামারেছবি: শাহ আলম

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ শুক্রবার বেলা তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৮ শতাংশ। জেলায় এটি চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আর মাত্র দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লেই ছুঁয়ে যেত তীব্র তাপপ্রবাহ। এর আগে এই পর্যবেক্ষণাগার গতকাল বৃহস্পতিবার একই সময়ে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৫ শতাংশ।

মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইতে থাকায় জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। বিশেষ প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ ছাতা মাথায় অথবা রিকশায় চলাচল করলেও সে সংখ্যা খুবই কম।

আর কয়েক দিন পর ঈদুল ফিতর। বিগত বছরগুলোতে ঈদ সামনে রেখে শহরের বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি এবং বিপণিবিতানগুলোতে জমজমাট বেচাকেনা চললেও এ বছর গরমের কারণে শহরে দিনের বেলা মানুষের উপস্থিতি কম। সমবায় নিউমার্কেটের চুয়াডাঙ্গা শাড়ি হাউসের কর্ণধার আতিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। যে কারণে বেচাকেনায় প্রভাব পড়েছে।

চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় দিনের বেলায় অনেকেই বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে শহরের ব্যস্ততম শহীদ হাসান চত্বরের অবস্থা
ছবি: প্রথম আলো

চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে তাঁরা মাথায় টুপি অথবা গামছা পরে চলাচল করছেন। কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা ক্লান্ত দেহ নিয়ে ছায়ায় বিশ্রাম করছেন। গরমের হাত থেকে শরীরকে শীতল করে জুড়িয়ে নিতে শহর থেকে কিশোর-যুবকেরা দল বেঁধে ছুটছে গ্রামাঞ্চলে নলকূপগুলোতে গোসল করতে।

আরও পড়ুন

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নূরনগরে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) খামারে সেচকাজে ব্যবহৃত প্রতিটি নলকূপের পানিতে কিশোর-যুবকদের দল বেঁধে গোসল করার দৃশ্য চোখে পড়ে। এসব কিশোর-যুবকের সবার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা শহরে। যাঁদের দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বাকিরা একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী। তাঁদের একজন সাইফুল ইসলাম বলেন, ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বাড়িতে গোসল করে স্বস্তি মিলছে না। গরমের হাত থেকে স্বস্তি পেতেই এত দূরে আসা।

শহরের ব্যস্ততম শহীদ হাসান চত্বরে সকাল ১০টার দিকে জনসমাগম ছিল বেশ। অথচ বেলা তিনটায় জনমানবহীন পরিবেশ চোখে পড়ে। যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা ইজিবাইকচালক রাসেল মিয়া বলেন, দিনের বেশির ভাগ সময় চুয়াডাঙ্গা শহরে যাত্রী পরিবহন করেন। বেশির ভাগ দিন চুয়াডাঙ্গা থেকে সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফেরেন। তবে আজকের (শুক্রবার) তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিকর গরমের কারণে বিকেলেই আলমডাঙ্গায় বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন।

প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, আগামীকাল শনিবার তাপমাত্রা একই রকম থাকতে পারে অথবা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে রোববার থেকে কমার সম্ভাবনা আছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, তাপপ্রবাহ চলাকালে তাপমাত্রা এড়িয়ে চলতে হবে। খাড়া দুপুরে কাজ না করে সকাল-দুপুরে কাজ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়াই ভালো। প্রত্যেককেই পানিসহ বেশি বেশি তরল খাবার খেতে হবে। বৃদ্ধ, শিশু এবং জটিল-কঠিন রোগে আক্রান্তদের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে। ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।