বগুড়ায় শ্যালক হত্যা মামলায় ভগ্নিপতির মৃত্যুদণ্ড, স্ত্রীর যাবজ্জীবন

মৃত্যুদণ্ড
প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় একটি খাদ্যপণ্য বিপণন প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকারী ভ্যানের চালক (ডেলিভারি ম্যান) জামাল উদ্দিন খাজা (৪৮) হত্যা মামলায় তাঁর ভগ্নিপতিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ব্যক্তির নাম মোজাফ্ফর হোসেন (৫৮)।

মামলার অপর আসামি জামাল উদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন আকতারকে (৪০) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আসামিদের দুজনকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এই অর্থ অনাদায়ে জেসমিনকে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক হাবিবা মণ্ডল এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোসাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামিরা কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসামি মোজাফফর হোসেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বয়ড়াদীঘি গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে। জেসমিন আকতার বগুড়া শহরের পূর্ব বৃন্দাবনপাড়ার বাসিন্দা নিহত জামাল উদ্দিন খাজার স্ত্রী। ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে জামাল উদ্দিন খাজাকে শাবল ও নোড়া দিয়ে মাথায় আঘাত করে নিজ বাসায় হত্যা করা হয়। পরদিন শয়নকক্ষ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আদালত সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে তাঁর শ্যালক জামাল উদ্দিনের স্ত্রী জেসমিন আকতারের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি নিয়ে জামাল-জেসমিন দম্পতির মধ্যে কলহ দেখা দেয়। একপর্যায়ে মোজাফফর জেসমিনের সঙ্গে পরামর্শ করে জামাল উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মোজাফফর ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে শয়নকক্ষে শাবল ও নোড়া দিয়ে জামালকে হত্যা করেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জামাল উদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলে জেমস রিমন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তভার ন্যস্ত করা হয় বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওপর। ডিবির উপপরিদর্শক মতিউর রহমান মামলার তদন্ত করেন।

মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে জামালের ভগ্নিপতি মোজাফফর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি শ্যালক জামাল উদ্দিনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তিতে মোজাফফর জানান, জেসমিন আকতারের সঙ্গে পরকীয়ার জের ধরে তাঁর স্বামী জামাল উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরকীয়া প্রেমের পথে বাধা হওয়ায় জামাল উদ্দিনকে হত্যা করা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও ডিবির এসআই মতিউর রহমান মোজাফ্ফর হোসেন এবং জেসমিন আকতারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। সাক্ষ্য গ্রহণ ও দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক আসামি মোজ্জাফর হোসেনকে মৃত্যুদণ্ড এবং জেসমিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নাসিমুল বারী হলি বলেন, স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হয়ে জামাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত শ্যালককে হত্যার দায়ে মোজাফ্ফর হোসেনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড এবং শ্যালকের স্ত্রী জেসমিন আকতারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেছেন। উচ্চ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হবে।