গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাৎ করে জমি কিনেছেন এজেন্ট ব্যাংকের ক্যাশিয়ার
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে বেসরকারি একটি ব্যাংকের এজেন্ট শাখা থেকে অন্তত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ওই এজেন্ট শাখার ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে। তাঁর নাম মাসুদ রানা। তিনি তিন কৌশলে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
কোনো গ্রাহকের স্থায়ী আমানতের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়নি। কৌশলে আঙুলের ছাপ নিয়ে অনেক গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে হিসাব নম্বর ছাড়াই ভাউচারে টাকা জমা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ওই এজেন্ট শাখায় ১০–১২ জন গ্রাহকেরই কোটি টাকা আত্নসাতের হিসাব পাওয়া গেছে। তবে আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ তিন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এজেন্ট শাখাটি ইসলামী ব্যাংকের। পুলিশ গতকাল রোববার রাতে এজেন্ট ব্যাংকের কার্যালয় থেকে ক্যাশিয়ার মাসুদ রানাসহ তিনজনকে আটক করে আক্কেলপুর থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। অপর দুজন হলেন শাখার ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানা ও এজেন্ট ব্যাংক কার্যালয়টির স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম। মাসুদ রানা গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের কথা অকপটে স্বীকারও করেছেন। টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রোববার রাতেই ফিরোজ আহমদ নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সকালে থানায় ক্যাশিয়ার মাসুদ রানার সঙ্গে কথা এই প্রতিবেদকের। এ সময় মাসুদ বলেন, ‘আমি ছয় মাস ধরে এমন কর্মকাণ্ড করেছি। আমি এসব টাকায় গ্রামের বাড়িতে পাঁচ-ছয় বিঘা জমি কিনেছি। ২৫ থেকে ৩০ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছি। মুরগির শেড করেছি। পুকুর করেছি। ডাঙ্গাপাড়ায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট দিয়েছি। এসবের লভ্যাংশ থেকে ধীরে ধীরে গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করার পরিকল্পনা করেছিলাম; কিন্তু এর আগেই জানাজানি হয়ে গেল। এখন জমিজমা বিক্রি করতে হবে।’
আজ সোমবার সকাল থেকেই উদ্বিগ্ন গ্রাহকেরা থানায় ইসলামী ব্যাংকের ওই এজেন্ট শাখায় ভিড় করতে থাকেন। এ সময় ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধিদল থানায় এসে প্রতারিত ও উদ্বিগ্ন গ্রাহকদের আশ্বস্ত করেন। আজ এজেন্ট ব্যাংকের কার্যালয়টির মূল ফটক তালাবন্ধ ছিল। এ কারণে শাখাটিতে ব্যাংকিং কার্যক্রম হয়নি।
গ্রাহক সুলতানা রাজিয়া বলেন, ‘আমি ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫ লাখ টাকা জমা দিয়েছি। আজ খেয়াল করে দেখি জমা ভাউচারে অ্যাকাউন্ট নম্বর ছাড়া সিল-স্বাক্ষর সবই ঠিক রয়েছে। আমার অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়নি।’ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পাঁচ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত করেছি। ক্যাশিয়ার আমাকে রহমানিয়া ভ্যারাইটি স্টোরের একটি চেক দিয়েছেন। আজ জানালাম চেকের স্বাক্ষরটি নকল। এখন পর্যন্ত আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ আড়াই কোটি টাকার কথা শোনা যাচ্ছে।’
শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে জড়িত আবদুল মোমিন বলেন, ‘সার্ভার দুর্বলের কথা বলে ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা আমার কাছে একই সঙ্গে দুবার ফিঙ্গার নিয়েছেন। প্রথম ফিঙ্গারের টাকা আমাকে দিয়েছেন। আমার অজান্তে দ্বিতীয় ফিঙ্গারে সময় ক্যাশিয়ার অঙ্ক বসিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন। ক্যাশিয়ার টাকা আত্মসাতের কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছেন।’
ইসলামী ব্যাংক জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এজেন্টে ব্যাংকের ক্যাশিয়ার তিন ধরনের প্রতারণা করে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আগামীকাল (মঙ্গলবার) এজেন্টে ব্যাংকে আমাদের লোকজন থাকবেন। গ্রাহকেরা শুধু অ্যাকাউন্টের হিসাব নিতে পারবেন। কোনো লেনদেন হবে না। এরপর আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ জানা যাবে। আমরা এখন পর্যন্ত এক কোটি টাকার ওপরে আত্মসাতের কথা শুনতে পাচ্ছি। তবে আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ তিন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে।’
ক্যাশিয়ার মাসুদ রানাকে খুব বিশ্বাস করতেন জানিয়ে এজেন্ট ব্যাংকের স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আগে কখনো তাঁর প্রতারণার ঘটনা টের পাইনি। ক্যাশিয়ার গ্রাহকদের টাকা আত্নসাৎ করে সম্পদ গড়েছেন। এসব সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হবে।’
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট শাখার গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় দারুল কোরআন মাদ্রাসার মুহতামিম ফিরোজ আহমদ বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এজেন্ট ব্যাংকের স্বত্বাধিকার জাহিদুল ইসলাম, এজেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানা ও ক্যাশিয়ার মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করা করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’