ভোটের পাঁচ দিন পর কেন্দ্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পরাজিত প্রার্থীর
বরগুনার তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পাঁচ দিন পর ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান পদের এক পরাজিত প্রার্থী। তাঁর অভিযোগ, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, জাল ভোট দেওয়াসহ অনেক অনিয়ম করা হয়েছে। গতকাল সোমবার লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকে নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের মারধর ও বাড়িতে হামলা করেছেন প্রতিপক্ষ ও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকেরা।
অভিযোগকারী ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর নাম রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার। তিনি তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
অন্যদিকে অভিযুক্ত ওই প্রার্থীর নাম মনিরুজ্জামান মিন্টু (আনারস প্রতীক)। তিনি একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
চতুর্থ ধাপে গত বুধবার তালতলী উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেয়ারম্যান পদের লড়াইয়ে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার (ঘোড়া প্রতীক) এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টুর (আনারস প্রতীক) মধ্যে। পরে আনারস প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হন।
লিখিত অভিযোগে পরাজিত প্রার্থী রেজবি-উল কবির বলেন, ‘৫ জুন চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আমাকে ১ হাজার ৯৯১ ভোটের ব্যবধানে মো. মনিরুজ্জামান মিন্টুর (আনারস প্রতীক) কাছে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেন মনিরুজ্জামান মিন্টুর সমর্থকেরা।’
৫ জুন চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আমাকে ১ হাজার ৯৯১ ভোটের ব্যবধানে মো. মনিরুজ্জামান মিন্টুর (আনারস প্রতীক) কাছে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর থেকেই আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেন মনিরুজ্জামান মিন্টুর সমর্থকেরা।পরাজিত প্রার্থী রেজবি-উল কবির
পরাজিত প্রার্থী রেজবি–উল কবির যোগ করেন, ‘তালতলী সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে গণনাকালে আমার এজেন্টদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আনারস প্রতীকের এজেন্টরা নামমাত্র গণনা করে আমার ভোট তাঁদের বান্ডিলে নিয়ে নেন। ওই কেন্দ্রে আমি ভোট পেয়েছি ৬৭টি; অথচ এই কেন্দ্র এলাকায় আমার ১৫০ জন কর্মী ছিলেন। ভোট গণনার সময় আনারস প্রতীকের লোকজন সেখানে প্রভাব বিস্তার করেছেন। বান্ডিল করার পর আর ভোটসংখ্যা যাচাই করা হয়নি।’
এ ছাড়া প্রতিপক্ষের সমর্থকদের বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের যেতে বাধা দেওয়া, ভয়ভীতি দেখানো এবং জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ করেন রেজবি।তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর আমার (ঘোড়া প্রতীক) কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা-মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আমার শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পাঁচ বছর আগেও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন মনিরুজ্জামান মিন্টু; তখনো তিনি (মিন্টু) লোকজনকে নির্যাতন করতেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বকালে তাঁর বিরুদ্ধে তৎকালীন ইউএনও, পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষক ও কয়েকজনকে লাঞ্ছিত, মারধর, কুপিয়ে জখমসহ নানা অভিযোগ ছিল।’
ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগের বিষয় জানতে তালতলী উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টুর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও রিটার্নিং কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম, জাল ভোট ও এজেন্টদের বের করে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচনের পাঁচ দিন পর তিনি (রেজবি) ভোটে অনিয়মের যে অভিযোগ করেছেন, তা সঠিক নয়।