জেলা প্রশাসকের আশ্বাস, পঞ্চগড় আদালত চত্বর ছাড়ল বৈষম্যবিরোধীরা

পঞ্চগড় আদালত চত্বরের সামনে দুপুর থেকে আন্দোলন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আজ রোববারছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড় জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে আদালত ঘেরাও, আদালতের মূল ফটকে তালা ও সড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আজ রোববার বেলা সোয়া দুইটায় আদালত চত্বরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়। জেলা প্রশাসকের আশ্বাসের পর রাত ৮টার কিছু আগে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা।

নিয়োগ-বাণিজ্য, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও হুমকির অভিযোগে গত বুধবার দুপুরের পর জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে পঞ্চগড়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করে জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে দাবি করা হয়, পঞ্চগড় আদালতের জেলা ও দায়রা জজ মো. গোলাম ফারুক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মণ্ডল, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুজ্জামান ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হেনা সিদ্দিকী এখনো আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করছেন। ওই দিন বিক্ষোভে এই চার বিচারককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের সময়সীমা বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা। বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ায় আজ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভের শুরুতে আন্দোলনকারীরা আদালতের ভেতরে থাকা সাধারণ মানুষকে বের হয়ে যেতে মাইকে ঘোষণা দেন। এরপর বেলা ২টা ২০ মিনিটে আন্দোলনকারীরা আদালতের মূল ফটকসহ সীমানাপ্রাচীরের সব ফটকে শিকল পেঁচিয়ে তালা দেন। এতে আদালতের ভেতরে থাকা বিচারপ্রার্থীসহ অন্য লোকজন আদালত চত্বরে আটকা পড়েন। এমনকি কাজ থাকা সত্ত্বেও অনেকে বাইরে থেকে আদালতের ভেতর ঢুকতে পারেননি। এরপর বিক্ষোভকারীরা মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করতে থাকেন। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী, মোকাদ্দেসুর রহমানসহ অন্যরা অংশ নেন।

বিকেল সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত আদালত চত্বরের ভেতরে বিচারপ্রার্থী, আইনজীবীসহ আদালত–সংশ্লিষ্ট লোকজন আটকা ছিলেন। সড়ক অবরোধও চলছিল। এ সময় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হোসাইন, পঞ্চগড় আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আদম সুফি আন্দোলনকারীদের ডেকে সমাধানের চেষ্টা করছিলেন। এরপর পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুনশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।

সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী আদালত চত্বরে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত হতে কিছুটা সময় লাগে। তবে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিদ্ধান্তটা আইন মন্ত্রণালয়ে সামারি হয়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। সিদ্ধান্ত হলো, অভিযোগ ওঠা চারজন বিচারক আগামীকাল থেকে পঞ্চগড় আদালতে কোনো বিচারকাজ করবেন না এবং তাঁরা এখান থেকে চলে যাবেন। আর আপনাদের যেসব অভিযোগ রয়েছে, তা লিখিত আকারে আমার কাছে দেবেন, আমি সেগুলো মাননীয় প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাব।’

জেলা প্রশাসকের ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল করতে করতে আদালত চত্বর ত্যাগ করেন। তবে ভাঙচুরসহ অন্যান্য ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে যেন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তারও দাবি জানান। এ সময় জেলা প্রশাসক তাঁর ওপর আস্থা রাখতে বলেন।