‘জাতীয় দলে খেললেও এর আগে এলাকা থেকে এমন সম্মাননা পাইনি’

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান শেষে খেলোয়াড়দের নিয়ে ফটোসেশন অনুষ্ঠিত হয়। মঙ্গলবার দুপুরে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় কাবাডি দলের খেলোয়াড় ছিলেন কাজী শাহীন আরা। এ সময়ে দলগত ও ব্যক্তিগত নানা অর্জন হয়েছে। তবে মাগুরার শালিখারপুলুম গ্রামে জন্ম নেওয়া সাবেক এ খেলোয়াড় বর্তমানে সাভারে একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পেশাদার খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় বা পরবর্তী সময়ে নিজ জেলায় কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা বা স্বীকৃতি পাননি কাজী শাহীন আরা।

অবশ্য আজ মঙ্গলবার তাঁর এ হতাশা দূর হয়েছে। এদিন তিনিসহ মাগুরা থেকে বিভিন্ন খেলায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা ২২ জন খেলোয়াড়কে সম্মাননা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।। দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সম্মাননা পেয়ে জাতীয় দলের সাবেক কাবাডি খেলোয়াড় কাজী শাহীন আরা বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভোরে ঢাকা থেকে এসেছি। জাতীয় দলে খেললেও এর আগে এলাকা থেকে এমন সম্মাননা পাইনি। নিজ এলাকার মানুষের কাছ থেকে সম্মাননা পাওয়া সবচেয়ে মধুর ব্যাপার।’ তিনি বলেন, ‘মাগুরার অনেকের কথা শুনেছি, তারা জাতীয় দলে খেলে। তবে আজ তাদের অনেককে সামনে থেকে দেখলাম। পরিচিত হলাম। এটা অনেক বড় পাওয়া।’

জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, ভালো কাজের স্বীকৃতির অংশ হিসেবে জেলার ২২ জন বর্তমান ও সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড়কে সম্মাননা জানানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ১৫ জন। সম্মাননা পাওয়া এই ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা তাঁদের কাজের মাধ্যমে মাগুরা জেলাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উজ্জ্বল করে চলেছেন। অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে খেলোয়াড়দের স্থানীয় লোকজনের পক্ষ থেকে হয়তো সম্মাননা জানানো হয়েছে। কিন্তু জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করা খেলোয়াড়দের একসঙ্গে এভাবে সম্মাননা জানানো হয়নি।

জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার মেহেদী হাসান উজ্জ্বল বলেন, ‘সাবেক হয়ে যাওয়ার পর খেলোয়াড়দের কেউ খোঁজ রাখেন না। কিন্তু এটা ভীষণ জরুরি। তাঁদেরকে সম্মান দিলে বা তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগালে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।’

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন মাগুরা–১ আসনের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। মঙ্গলবার দুপুরে মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

সম্মাননা পাওয়া অন্য খেলোয়াড়েরা হলেন অরূপ বৈদ্য (সাবেক ফুটবলার), মো. মেহেদী হাসান রয়েল (বর্তমান ফুটবলার), মিন্টু শেখ (সাবেক ফুটবলার), ইতি রানী (বর্তমান ফুটবলার), ফাহিমা খাতুন (ক্রিকেটার), দিশা বিশ্বাস (ক্রিকেটার), সাথী বিশ্বাস (ফুটবলার), সৈয়দ নাজমুল হাসান লোভন (সাবেক ফুটবলার), মোহাম্মদ রহমত মিয়া (বর্তমান ফুটবলার), শামীমা সুলতানা (ক্রিকেটার), ইসমাইল হোসেন (ভলিবল খেলোয়াড়), মো. তিতাস আহমেদ (ভলিবল খেলোয়াড়), মো. সাজিদ হোসেন (কাবাডি খেলোয়াড়), সৈয়দ মাহফুজুর রহমান (দাবাড়ু), রুমকি সিদ্দিকা (তায়কোয়ান্দো খেলোয়াড়), মো. মোতাহার হোসেন (উশু খেলোয়াড়), রিয়াদুল ইসলাম (ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জ ক্রিকেট টিম), শারমিন আক্তার রত্না (শুটার), এ এফ এম এহতেশামুল হক (ক্যারম খেলোয়াড়) ও মোছা. ইমনা খাতুন (অ্যাথলেট)।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এ অধিনায়ক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘মাগুরা জেলা ক্রীড়ার জন্য উর্বর একটা জায়গা। আমরা সবাই মিলে ক্রীড়া ক্ষেত্রে আরও যেসব জায়গায় উন্নতি করা সম্ভব, তা করতে চাই।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ বলেন, ‘নাগরিকদের ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করতে জেলা প্রশাসন এ স্বীকৃতি দিচ্ছে। এর আগে সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখায় ৭০ জনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি, এতে মানুষের ভালো কাজ করার আগ্রহ আরও বাড়বে।’ তিনি জানান, জেলার বর্তমান ও সাবেক জাতীয় খেলোয়াড়দের জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো নিয়ে একটি প্রকাশনা করা ও সব জাতীয় খেলোয়াড়ের ছবি ক্রীড়া সংস্থার কার্যালয়ে টাঙানোর ঘোষণা দেন তিনি।