বিশ্বাস ধরে রাখার দায়িত্ব জনগণের না, আপনার: নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানছবি: সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা অনেকেই মনে করছেন, সামনে আপনাদের জন্য ফাঁকা। বিশ্বাস করুন, আপনাদের সামনে অসম্ভব শক্তিশালী অদৃশ্য দেয়াল অপেক্ষা করছে, যেটি ভেদ করে যেতে খুব কষ্ট হবে। কাজেই কেয়ারফুল, এখন থেকেই সাবধান হতে হবে। জনগণের কাছে যান, জনগণের আস্থা অর্জন করুন। অবশ্যই জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ আমাদের করতে হবে। জনগণ যা চায়, তার বাইরে গেলে আপনারা টিকতে পারবেন না।’

শনিবার রাজশাহী জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতা-কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। দিনব্যাপী এ কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি। এতে বিভাগের আট জেলার নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। বিকেলে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফার বিষয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন তারেক রহমান।

তারেক রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্যে আপনারা বলেন, জনগণ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। বিএনপি সেই রকম একটি দল, দেশের মানুষ যাকে আস্থায় রাখে। এখানে বড় একটা কিন্তু আছে। জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা আপনাকে ধরে রাখতে হবে। বিশ্বাস ধরে রাখার দায়িত্ব জনগণের না, দায়িত্ব আপনার। আপনার চলনে-বলনে, ওঠা–বসায় জনগণ যে আস্থা ও বিশ্বাস আপনার ওপরে রেখেছে, সেটা ধরে রাখতে হবে। পরিবারের একজন সদস্যের দায়িত্ব যেভাবে পালন করেন, সেইভাবে।’

কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কবির। জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘বিগত স্বৈরাচারের সময় আমাদের প্রায় ৬০ লক্ষ নেতা-কর্মীর নামে মিথ্যা মামলা হয়েছে। এটি গায়েবি মামলা নামে সারা দেশে পরিচিত। অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে কথা বলছি। এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া, চলমান প্রক্রিয়া। একবারে হয়তো সম্ভব হবে না। পর্যায়ক্রমে নিশ্চয় আমরা গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করাব বা করাতে সক্ষম হব।’

এ সময় বগুড়ার মোজাম্মেল হক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানান, বর্তমানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধরে আনছে কিন্তু আদালত সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জামিন দিচ্ছে। অথচ আগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের এত দ্রুত জামিন হয়নি। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ওদের পার্থক্যটা এখানেই। আমরা যে বৈষম্যের শিকার হয়েছি, সেটিকে আমরা ভাঙতে চাই। বৈষম্যের শিকার যাতে মানুষ না হয়, সেই প্র্যাকটিসটা আমরা গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন।’

রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে সব তথ্য নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে কি না, প্রশ্ন করলে তারেক রহমান বলেন, ‘এখানে একটি বিষয় আছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কিছু বিষয় থাকে। যেগুলোকে স্বাভাবিক নিরাপত্তার নজরে দেখতে হবে। সব ডিসক্লোজ করা সব সময় বোধ হয় করা যায় না, সম্ভব না। এর বাইরে যেগুলো থাকবে, সেগুলো অবশ্যই স্বচ্ছ থাকবে। যে কেউ দেখতে পারবে। এই সিস্টেমটা আমাদের গড়ে তুলতে হবে।’

ফারাক্কা বাঁধ থেকে পদ্মার পানির হিস্যা আদায়ের ব্যাপারে দলের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করলে তারেক রহমান বলেন, ‘ফারাক্কা বাঁধের বিষয়ে আমাদের একটি ধারণা আছে। এটি আন্তর্জাতিক বিষয়। বিএনপির বাইরে অন্য সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তারা যথাযথভাবে এটা দেখেনি। পতিত স্বৈরাচার সরকার ইচ্ছা করেই করেনি, প্রতিবেশী দেশকে খুশি করার জন্য। এটা আন্তর্জাতিক লবি। আমরা সময়মতো অবশ্যই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কাজ করব।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গবেষণায় উঠে আসছে বাংলাদেশের অনেকাংশ, অর্ধেক বা তার কম অংশ ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। খালেদা জিয়া সরকারের সময় আমরা বৃক্ষমেলা করতাম। আমাদের যেভাবেই হোক, এই কর্মসূচি আবার শুরু করতে হবে। সবাইকে উৎসাহ দিতে হবে বৃক্ষরোপণের জন্য। ব্যক্তিগতভাবে আমার একটা পরিকল্পনা আছে। আগামী দিনে আমরা সুযোগ পেলে পাঁচ বছরে আমরা পাঁচ কোটি বৃক্ষ রোপণ করব।’

এর আগে সকালে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মাহাদী আমিন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান (মিনু), কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

কর্মশালায় আলোচক ছিলেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশিদা বেগম (হীরা) ও কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবিব। সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির সদস্যসচিব এ বি এম মোশাররফ হোসেনের সঞ্চালনায় কর্মশালায় কেন্দ্রীয় নেতা ওবায়দুর রহমান (চন্দন), আমিরুল ইসলাম, আবদদুস সাত্তার পাটোয়ারী, রেহেনা আক্তার বানু, নেওয়াজ হালিমা আরলী, শফিকুল হক (মিলন) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।