ক্ষুধা পেটে রেখে সংস্কার হয় না: রিজভী
ক্ষুধা পেটে রেখে সংস্কার হয় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি জুলাইয়ের ঘোষণার কথা বলবেন, অনেক সংস্কারের কথা বলবেন; কিন্তু যখন মানুষের পেটে ক্ষুধা থাকবে, তখন এই ঘোষণা দিয়ে কিছু হবে না, মানুষ এগুলো চিনবে না। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, সিন্ডিকেটকারীদের ধরতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এতে সবার মধ্যে একটা স্বস্তি আসবে। মোটা চাল ও মোটা কাপড় পড়ে জীবন ধারণ করতে হবে, মানুষ সেই নিশ্চয়তা চায়। এটাই জিয়াউর রহমান নিশ্চিত করেছিলেন।’
আজ রোববার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের এক যুগপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা জিয়া স্মৃতি পাঠাগার।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আপনারা সংস্কার করবেন করুন, কিন্তু এমন সংস্কার করুন, যেন আর কোনো দিন ফ্যাসিবাদের উত্থান না হয়। এখনো চালের দাম কমেনি। হয়তো সবজির দাম কিছুটা কমেছে; কিন্তু চালের দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। চালের দাম না কমানোর কারণে, দুর্ভিক্ষের কারণে শেখ মুজিবের পাহাড়সমান জনপ্রিয়তা একেবারে ধুলায় লুটিয়ে গেল এবং পরিবারসহ মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। এটা আওয়ামী লীগ কোনো দিন বিশ্লেষণ করেনি।
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। নৈতিক শিক্ষা মানুষের চরিত্রকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে। এ দেশে হাসিনার সময়ে শুধু প্রশ্নপত্র ফাঁস আর প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের যেন প্রতিযোগিতা চলেছে। পিএসসিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস শেখ হাসিনার আমলে সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। কারণ, দেশের লোক শিক্ষিত হোক, নৈতিকভাবে গড়ে উঠুক, তিনি (শেখ হাসিনা) চাননি।
রিজভী যোগ করেন, যখন রাষ্ট্রে ও সমাজে নৈতিকতায় ধস নামে, তখন সর্বত্রই তা প্রসারিত হয়। শুধু বাবজানের নাম ও ভাই-বোনের নাম ছাড়া আর কোনো ইতিহাস নেই। জোর করে একধরনের ভয়ংকর ফ্যাসিবাদী, দুঃশাসনের রাজনীতি তৈরি করেছিলেন। শেখ কামালের নামে সেতু কেন? তাঁর নামে তো ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ আছে। তা তো জনগণের কাছে ক্লিয়ার (স্পষ্ট) করেননি।
রিজভী আরও বলেন, মানুষ বেকার থাকলে খারাপ চিন্তা আসে। মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য জিয়াউর রহমান যে কাজগুলো করেছেন, তা কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেননি। এই যে আজকে দুবাই, ওমান, সৌদি আরব, মালয়েশিয়ায় প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, তা কার অবদান; জিয়াউর রহমানের অবদান। মানুষের যখন কর্মসংস্থান হবে, তখন তাঁরা জীবন–জীবিকা তৈরি করে নেবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সংস্কার করতে হবে। তারা কথায় কথায় যেন গুলি না করে। জনতার মিছিল, মানুষের মিছিল যেকোনো কারণে হতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে কাঁদানে গ্যাস মারতে পারে, লাঠিপেটা করতে পারে; কিন্তু মিছিলের আওয়াজ শোনার সঙ্গে সঙ্গে গুলি করবেন? গত ১৭ বছরে বিএনপির কোনো মিছিলের আওয়াজ শুনলে সেখানে শটগান দিয়ে গুলি! কত মানুষ যে অন্ধ হয়েছে, কত মানুষের যে পা চলে গেছে! এগুলো নিষিদ্ধ করতে হবে।
পুলিশ বাহিনীকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে বলে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, পুলিশ বাহিনীর সংস্কারই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সংস্কার। মানুষের আহার নিশ্চিত করতে সংস্কার করতে হবে। বিচার বিভাগের সত্যিকারের স্বাধীনতা থাকতে হবে। একজন নিরীহ মানুষ যদি অত্যাচারিত হন, তাহলে তিনি আদালতে আশ্রয় নিতে পারেন এবং সেই আদালত প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। এর চেয়ে বড় আর সংস্কার হতে পারে না। আর এগুলো করার জন্য বেশি সময়ও লাগে না। সংস্কার তো হচ্ছে চলমান প্রক্রিয়া। একটা বন্ধ রাখব, আরেকটি করব, এভাবে হয় না।’
অধ্যাপক ইউনূস সরকারের প্রতি বিএনপির সমর্থন রয়েছে জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারা যদি জনকল্যাণের দিকগুলো দ্রুত বিবেচনা করে, গণতন্ত্রের যে যাত্রা, গণতন্ত্রের যে পথরেখায় পৌঁছানো—এটা নিশ্চিত করতে না পারলে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
সভায় জেলা জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মোস্তফার সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খানম, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন জেলা জাসাসের শিল্পীরা। এরপর জিয়াউর রহমান জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন, হামদ ও নাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেন অতিথিরা।