ভাসানচরে নেওয়া হলো আরও পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গাকে

উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে আরও ৫০৬জন নতুন রোহিঙ্গা স্বেচ্ছায় নোয়াখালীর ভাসানচরে যাচ্ছেন। গতকাল রাতে বাসে করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তাঁরাছবি-প্রথম আলো।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে আরও ৫০৬ জন রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নৌবাহিনীর পাঁচটি জাহাজে করে তাঁদের ভাসানচরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জড়ো হন ভাসানচর যেতে আগ্রহী ৫০৬ জন রোহিঙ্গা। ভাসানচর থেকে উখিয়া-টেকনাফে স্বজনদের কাছে বেড়াতে আসা আরও ৩৯৫ জন রোহিঙ্গা তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। এসব ব্যক্তি এবং তাঁদের মালামাল নিয়ে রাতে পতেঙ্গার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ১৯টি বাস ও ৪টি কাভার্ড ভ্যান।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের তথ্যমতে, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পাঠানোর এটি ২৪তম ধাপ। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো হয়েছিল।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ২৪তম ধাপে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে নৌবাহিনীর ৪টি জাহাজ বিকেলের মধ্যেই ভাসানচরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

গতকাল বিকেলে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে কথা হয় ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশে অপেক্ষারত আলী আহমদের সঙ্গে। তিনি এত দিন বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ছিলেন। স্ত্রী ও পাঁচ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভাসানচরে যাচ্ছেন। আলী আহমদ বলেন, ‘এখানে (উখিয়ায়) অনেক সমস্যা। সন্ত্রাসীরা যখন-তখন ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, চাঁদা আদায় করে। খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণের ঘটনা লেগেই আছে। তা ছাড়া বর্ষায় পাহাড়ধসের ঝুঁকি নিয়ে ঝুপড়িতে থাকতে হয়। তাই স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যাচ্ছি।’

পরিবারের ১৩ সদস্য নিয়ে জামতলী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দেন নবী হোসেন। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সদস্যসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জামতলীতে পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। ভাসানচরে থাকা রোহিঙ্গারা বেশি রেশন পায়। তাই ভাসানচরে চলে যাচ্ছি।’  তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সেখানেও ফিরে যাওয়ার কোনো পথ দেখছেন না তিনি। ভাসানচরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

সরকারি তথ্যমতে, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই জায়গায় ১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা নয়ন প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে আট মাস পর আবার রোহিঙ্গার একটি দল ভাসানচরের পথে রওনা হয়েছে।