লক্ষ্মীপুরে বন্যার পর ডায়রিয়ার প্রকোপ, আক্রান্ত বেশি শিশুরা

শয্যা খালি না থাকায় মেঝেতে বিছানা পেতে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। গতকাল সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো।

দেড় বছর বয়সের শিশু আমিনা বেগম ডায়রিয়া আক্রান্ত দুই দিন ধরে। ভর্তি রয়েছে লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে। অসুস্থ শিশুটি ঠিকমতো ঘাড়ও নাড়াতে পারছিল না। তাকে কোলে নিয়ে হাসপাতালের মেঝেতে বসে রয়েছেন মা পারুল আক্তার।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে দেখা যায় এই চিত্র। পারুল আক্তার বলেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ি সদর উপজেলার টুমচর এলাকার। বাড়ির চারপাশে বন্যার পানি। বৃহস্পতিবার সকালে মেয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। প্রথম দিন বাড়িতে রেখে ওষুধ খাইয়েছেন। সুস্থ না হওয়ায় উপায় না দেখে পরদিন সকালে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতাল থেকে কেবল স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে। বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে এনেছেন।

পারুলের মেয়ে আমেনা বেগমের মতো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের ভিড় দেখা গেছে লক্ষ্মীপুর হাসপাতালে। ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মোট শয্যা ১০টি, তবে আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডায়রিয়ার রোগী ছিল ১২২ জন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গাদাগাদি করে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। শয্যা না পেয়ে রোগীদের জন্য মেঝেতে বিছানা পাতা হয়েছে। হাসপাতালে স্ত্রীকে নিয়ে আসা দিঘলী গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল আলম বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে বাড়িতে কোমরপানি। চার দিন ধরে তাঁর স্ত্রী নাছিমা বেগমের জ্বর আর ডায়রিয়া। হাসপাতালে অনেক রোগী। মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছেন তাঁর স্ত্রী।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বন্যার পর এক সপ্তাহ ধরে লক্ষ্মীপুরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। আক্রান্ত রোগীদের ৮০ ভাগই শিশু। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ডায়রিয়া রোগীদের কেউ কেউ। অনেকে ঘরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জেলার পাঁচটি সরকারি হাসপাতালে আজ শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ছিল ১৭৬ জন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ১২২ জন, কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ জন, রামগতিতে ১৯ জন, রায়পুরে ৫ জন এবং রামগঞ্জে ২ জন ভর্তি রয়েছেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে। সব কাজে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বন্যার পানি বা বন্যায় তলিয়ে যাওয়া নলকূপ বা অন্য কোনো উৎসের পানি জীবাণু দ্বারা দূষিত থাকায় কোনো অবস্থাতেই এসব পানি দিয়ে হাত-মুখ ধোয়া, কুলি করা বা পান করা যাবে না। বন্যার পানিতে গোসল করা, কাপড়চোপড় ধোয়া, থালাবাসন পরিষ্কার করা চলবে না। যতটা সম্ভব বন্যার পানি এড়িয়ে চলতে হবে।

লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অরূপ পাল বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বেশি হচ্ছে শিশুরা। খাওয়ার পানি ও খাবার থেকে মূলত এটি হচ্ছে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে অনেক ডায়রিয়ার রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যার কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। জেলার ৫৮টি মেডিকেল টিম সেবা দিচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা দুর্গম এলাকায় বানভাসিদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিচ্ছেন। ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আহাম্মদ কবীর আরও বলেন, বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে নানা ধরনের রোগবালাই দেখা যায়। এর মধ্যে পানি ও কীটপতঙ্গবাহিত রোগের সংখ্যাই বেশি। বন্যার সময় ময়লা-আবর্জনা, মানুষ ও পশুপাখির মলমূত্র এবং পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা একাকার হয়ে জীবাণু চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে বন্যায় সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার বেড়ে যায়।