খুলনায় ক্লাব দখল করে কার্যালয় করার পর মাইক লাগিয়ে যুব অধিকারের মানববন্ধন
খুলনা নগরের শান্তিধাম মোড় এলাকায় পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্রের কার্যালয় দখলে নেওয়ার পর মাইক লাগিয়ে মানববন্ধন করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংগঠনটির মহানগর শাখার ব্যানারে নেতা-কর্মীরা এ মানববন্ধন করেন।
এর আগে গতকাল সোমবার দুপুরে পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্রের কার্যালয়ের তালা ভেঙে কার্যালয়টি দখল করেন গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা। পরে পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্রের সাইনবোর্ডের জায়গায় ‘গণ অধিকার পরিষদ, খুলনা মহানগর ও জেলা কার্যালয়’ লেখা একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেন। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশেদুল ইসলাম। পরে বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সমালোচনার মুখে রাশেদুলকে অব্যাহতি দিয়ে রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি।
এ বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শাকিল উজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই গণ অধিকার পরিষদ সব সময় দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এসেছে। দলের কেউ যদি এ ধরনের কাজে যুক্ত থাকে তাঁকেও দল কখনো প্রশ্রয় দেয় না। এ কারণে দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকায় শেখ রাশেদুল ইসলামকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তবে আজ বিকেলের মানববন্ধনে অব্যাহতি পাওয়া নেতা শেখ রাশেদুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও খুলনার কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ খুলনা মহানগরের সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাইজিদ হোসেন, বাগেরহাট জেলার সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহমেদসহ নগরের বিভিন্ন থানার নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন। মানববন্ধনে কার্যালয় দখলের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের কড়া সমালোচনা করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গতকাল গণপূর্তের একটি ভবন, যেখানে তাঁরা সব আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উঠেছেন। সেখানে পঞ্চবীথি নামের একটি ভুঁইফোড় সংগঠন ছিল, যারা মাদক, জুয়ার আড্ডা বসাত। তারা মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলছিল—সেই অভিযোগ তাঁদের কাছে এলে তাঁরা তাদের উচ্ছেদ করেন। কিন্তু কিছু ভুঁইফোড় নিউজপোর্টাল ও সাংবাদিকেরা রং মাখিয়ে সেটাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাঁরা ওই সব অপেশাদার সাংবাদিকদের প্রতি ধিক্কার জানান।
শান্তিধাম মোড়ের ভবনটি মূলত গণপূর্তের দ্বিতল একটি ভবন। ভবনের দ্বিতীয় তলায় পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্র ক্লাবের কার্যক্রম চলত। আর নিচতলায় আরও কিছু সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে। ২০১০ সালের দিকে গণপূর্ত থেকে নিজেদের নামে বরাদ্দ আনে পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্র। এরপর প্রায় ১৪ বছর ধরে সেখানে ক্লাবের কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন ক্রীড়া চক্রের কর্মকর্তারা।
তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ ও ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়ার ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গণ অধিকারের অব্যাহতি পাওয়া নেতা শেখ রাশেদুল ইসলাম। তখন তিনি একটি গণমাধ্যমে ফেসবুক লাইভে বলছিলেন, ‘আমাদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল, এখানে পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্রের অবৈধ কার্যক্রম চলত। এখানে জুয়া খেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। ৫ আগস্টের পর এসব অভিযোগের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ক্লাবটি অবৈধভাবে জায়গাটি দখল করে আছে। এরপর আমরা আমাদের প্রক্রিয়াতে তাঁদের উচ্ছেদের জন্য বারবার বলেছি। তারা সরবে না; বিধায় আমরা স্থানীয় ও আরও যেসব রাজনৈতিক দল আছে, সবাইকে বলে এটাকে উচ্ছেদ করার জন্য আজ এসেছি। এখানে যেন কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ না হয়, সে জন্য আমরা আজ থেকে এখানে পাহারায় থাকব।’
পঞ্চবীথি ক্রীড়া চক্রের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ক্লাবের সভাপতি বর্তমানে খুলনার বাইরে আছেন। তিনি খুলনায় এলে ক্লাবের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।