দেরিতে ছাড়ছে ট্রেন, যাত্রীদের ভোগান্তি
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর ট্রেন চলাচল শুরু হলেও সূচি বিপর্যয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা।
আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। প্রতিটি ট্রেনই স্টেশনটি ছাড়ছে নির্ধারিত সময়ের এক থেকে দুই ঘণ্টা পর।
রেলের রানিং স্টাফরা গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটায় রেল উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন। এরপর আজ ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ট্রেনে যাত্রী অনেক কম। স্টেশনে নিয়োজিত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাত্রীদের অনেকেরই ধারণা ছিল, আজ ট্রেন চলবে না। মধ্যরাতে কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়টি অনেকে তাৎক্ষণিক জানতে পারেননি। ফলে যাত্রার প্রস্তুতিও নেননি তাঁরা। এ কারণে যাত্রীর চাপ নেই।
চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে সকালে প্রথম ট্রেন ছাড়ার কথা সকাল ছয়টায়। ঢাকাগামী চট্টলা এক্সপ্রেস নামের এই ট্রেন ছেড়েছে ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরিতে সকাল ৮টা ১০ মিনিটে। সকাল সাড়ে সাতটায় সুবর্ণ এক্সপ্রেস ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ৯টা ১০ মিনিটে। দেড় ঘণ্টা দেরিতে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ছেড়েছে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। কক্সবাজার ঈদ স্পেশাল সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়েনি। এ ছাড়া ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস সকালে চট্টগ্রাম স্টেশনে আসেনি।
চট্টগ্রাম স্টেশন ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাত আড়াইটায় কর্মবিরতি প্রত্যাহারের বিষয়টি তাঁরা জানতে পারেন। তবে লোকোমাস্টাররা (চালক) এসেছেন সকাল ছয়টার পর। তাই ট্রেনের সার্বিক প্রস্তুতি যথাসময়ে নেওয়া যায়নি। এ জন্য সকালে সূচি মেনে ট্রেন চালানো সম্ভব হয়নি। তবে বিকেলের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশাবাদী। আবু বক্কর সিদ্দিক আরও বলেন, ‘আজ ১১টি আন্তনগর ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিছুটা বিলম্ব হলেও কোনো ট্রেনেরই যাত্রা বাতিল করা হচ্ছে না।’
চট্টগ্রামের একটি কলেজের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাবেন। এ জন্য সুবর্ণ এক্সপ্রেসের টিকিট কেটেছিলেন। পরিবার নিয়ে শেষ পর্যন্ত ট্রেনে যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন। কিছুটা দেরি হলেও যেতে পেরে ভালো লাগছে।
ট্রেনের সূচি বিপর্যয়ে ভোগান্তির কথা জানিয়ে চট্টলা এক্সপ্রেসের যাত্রী আরিফুর রহমান বলেন, ঢাকায় জরুরি কাজ আছে। আদৌ যেতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। মধ্যরাতের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের খবর শুনেছেন। এরপর ভোরে তাড়াহুড়ো করে প্রস্তুতি নিয়ে স্টেশনে চলে আসেন। কিন্তু এসে দেখেন, ট্রেন ঠিক সময়ে ছাড়ছে না।
মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক দেওয়া এবং নিয়োগপত্রের দুই শর্ত প্রত্যাহারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। তাঁরা ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। দাবি না মানায় সোমবার মধ্যরাত থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন রানিং স্টাফরা।
রেলওয়ের রানিং স্টাফ বলতে ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও টিকিট পরিদর্শকদের (টিটি) বোঝানো হয়। তাঁরা ১৬০ বছর ধরে মাইলেজ সুবিধা পাচ্ছিলেন। অর্থাৎ দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসাবে বাড়তি অর্থ পেতেন। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এ সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।
রানিং স্টাফ সংগঠনের নেতারা জানান, রেলওয়ের রানিং স্টাফরা ১৬০ বছর ধরে অবসরের পর মাইলেজের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পেয়ে আসছেন। এ সুবিধা সীমিত করায় ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিলও ট্রেন ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছিলেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলে ওই কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছিল।