ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ
হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে তাঁর কথিত স্ত্রীর করা ধর্ষণ মামলায় আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের (জেলা জজ) নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে সাক্ষ্য দেন তাঁরা।
সাক্ষ্য দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন কর্ণ কুমার, শেখ ফরিদ ও মতিউর রহমান। তিনজনই ঘটনার সময় সোনারগাঁ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ছিলেন। এই নিয়ে এই মামলায় বাদীসহ মোট ১৮ জন আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি রকিব উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পুলিশের আরও তিন কর্মকর্তা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। সাক্ষীরা আদালতে বলেছেন, তাঁদের মামলার বাদী ঘটনার দিন জানিয়েছেন, মামুনুল হক বাদীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রয়েল রিসোর্টে এনে ধর্ষণ করেছেন। প্রত্যেক সাক্ষী তাঁদের সাক্ষ্যে এই কথা বলেছেন। এই মামলায় মোট ৪৩ সাক্ষীর মধ্যে মোট ১৮ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে মামুনুল হককে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) নাজমুল হাসান। এর আগে সকাল ৯টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কাশিমপুর কারাগার থেকে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক প্রথম আলোকে জানান, আদালতে অষ্টমবারের সাক্ষ্যে দুজন সাধারণ মানুষ ও চারজন পুলিশের সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। এর মধ্যে তিন পুলিশ কর্মকর্তা আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, মামলার বাদীর এজাহার ও ১৬১ ধারার জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষীদের ভাষ্যের কোনো মিল নেই। সাক্ষীরা জেরার সময় সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি, তাঁরা এলোমেলো উত্তর দিয়েছেন। মামলায় মামুনুল হক খালাস পাবেন বলে আশাবাদী তাঁর আইনজীবী।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে একটি রুমে কথিত স্ত্রীসহ হেফাজতে ইসলামের সে সময়ের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজত ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে মামুনুল ও তাঁর কথিত স্ত্রীকে ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার ১৫ দিন পর ওই বছরের ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
রয়েল রিসোর্ট–কাণ্ডের ঘটনার ২৭ দিন পর ২০২১ বছরের ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে ওই নারী বাদী হয়ে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে অভিযোগ গঠন করা হয়।