লক্ষ্মীপুর
অটোরিকশা চলে ৮ হাজার, লাইসেন্স আছে ২০০টির
লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের কারণে বাড়ছে দুর্ঘটনা। বিআরটিএ বলছে, লাইসেন্স করতে চালকদের আগ্রহ নেই।
লক্ষ্মীপুর জেলায় নিবন্ধিত সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলে প্রায় ৮ হাজার। এর মধ্যে লাইসেন্স আছে মাত্র ২০০ জন চালকের। লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকেরা প্রায়ই নানান দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন সড়কে। তবে এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। পুলিশ-প্রশাসনের দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার সুযোগ নিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন অটোরিকশার চালকেরা।
জেলার অটোরিকশাচালক জালাল আহাম্মদ বলেন, ‘বছরজুড়ে লাইসেন্স ছাড়া চলাচল করলেও তাঁদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। মাঝেমধ্যে ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ অভিযান পরিচালনা করলে মুহূর্তের মধ্যে আমাদের কাছে খবর চলে আসে। তখন সড়কে এক-দুই ঘণ্টা অবস্থান করি না।’
লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় নিবন্ধিত অটোরিকশা আছে ৮ হাজার ৮১টি। এর মধ্যে ২০০ জন অটোরিকশাচালকের লাইসেন্স রয়েছে। অধিকাংশ চালক লাইসেন্স করতে আগ্রহী নন। আগে অল্প কয়েকজন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের অক্ষরজ্ঞান না থাকায় লাইসেন্স দেওয়া হয়নি।
লক্ষ্মীপুর সার্কেল বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরতে চলতি বছর বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়েছে। চালকদের লাইসেন্সের আওতায় আনতে নানাভাবে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
লাইসেন্স করতে নানান ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয় বলে চালকেরা লাইসেন্স করতে চান না। এ কথা জানান অটোরিকশাচালক মো. সুমন ও মফিজ মিয়া। লাইসেন্স না থাকার কথা স্বীকার করে তাঁরা বলেন, এখানকার অধিকাংশ চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে তাঁরা গাড়ি চালান। এ জন্য লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরতে তাঁদের কোনো তৎপরতা নেই।
অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা, মামলার সংখ্যা কম
গত ডিসেম্বরে লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকায় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তার পাশের ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলে মারা যান রামগতি উপজেলার চরআফজাল এলাকার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন। এ সময় শিশুসহ আরও পাঁচজন আহত হন।
গত ১৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর ঠিকা গ্রামের বাজার এলাকায় ট্রাকের সঙ্গে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। এতে নিহত হন নাছিমা আক্তার (২৫) নামের অটোরিকশার এক যাত্রী।
গত ২৯ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-চাঁদপুর সড়ক দিয়ে অটোরিকশায় করে চাঁদপুরে যাচ্ছিলেন পাঁচ যাত্রী। সড়কের সিংহের পুল নামক স্থানে অটোরিকশাটি একটি ছাগলের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে আহত হন সাইফুল ইসলাম নামের এক যাত্রী।
এমন এক-দুটি ঘটনা নয়; অটোরিকশার দুর্ঘটনার এ চিত্র লক্ষ্মীপুর জেলায় ঘটছে প্রতিদিনই। লক্ষ্মীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, গত অক্টোবর ও নভেম্বর দুই মাসে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ঘটনায় থানায় কেউ মামলা করেননি। অটোরিকশাচালকদের অধিকাংশই আগে রিকশা চালাতেন। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই তাঁরা হঠাৎ অটোরিকশা চালানো শুরু করেন।
পুলিশের ওপর চড়াও হচ্ছেন অটোরিকশার চালকেরা
১৫ জানুয়ারি সড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় লক্ষ্মীপুর শহরের বাড়বাড়ি এলাকার মেঘনা সড়কে কাগজপত্র না থাকায় কয়েকটি অটোরিকশা জব্দ করে ট্রাফিক পুলিশ। এর জের ধরে অটোরিকশাচালকেরা তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এতে ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট টারজান বড়ুয়া, কনস্টেবল ছোটন ভট্টাচার্য ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সবুজ মিয়া আহত হন। পরে অটোরিকশাচালকেরা জড়ো হয়ে লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করেন।
এ ঘটনায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মহিউদ্দিন জুয়েল বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭০ জনকে আসামি করে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ এ পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরতে আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করছি। লাইসেন্স না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে প্রতি মাসে জরিমানা করে টাকা সরকারি কোষাগারে জামা দিচ্ছি। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে কঠোরভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা কোনোভাবেই আগ্রহী হচ্ছেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি।’