আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা চান চেয়ারম্যানের অনুসারীরা

বাউফল উপজেলা চেয়ারম্যানকে মারধর করে আহত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। মঙ্গলবার বাউফল থানার সামনের সড়কে

পুলিশ ও র‍্যাবের উপস্থিতিতে পটুয়াখালীর বাউফলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদারের ওপর হামলা ও কুপিয়ে আহত করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাউফল পৌরসভার কাগুজিরপুল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি গোলাবাড়ি, বাউফল প্রেসক্লাব, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ও বাজার রোড হয়ে বাউফল থানার পাশে ইলিশ চত্বরে শেষ হয়। সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। তাঁরা স্থানীয় সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

একই দিন জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে উপজেলা সদরসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তিমিছিল করার কথা ছিল মোতালেব হাওলাদারের বিরোধী হিসেবে পরিচিত স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের অনুসারীদের। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে শান্তিমিছিলের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন তাঁরা। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এরপরও সহিংসতা এড়াতে উপজেলা সদরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আজ সকাল থেকে বিপুল পরিমাণ র‍্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।

গত শুক্রবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচি ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হন। এ সময় আ স ম ফিরোজের সামনে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে আবদুল মোতালেব হাওলাদারকে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন। এই হামলার প্রতিবাদে আজ উপজেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সমাবেশ পালন করার জন্য গত রোববার ঘোষণা দিয়েছিলেন মোতালেবের লোকজন।

ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাউফল পৌরসভার কাগুজিরপুল এলাকায় একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মোতালেব হাওলাদারের ছেলে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান।

মিছিলটি গোলাবাড়ি, বাউফল প্রেসক্লাব, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ও বাজার রোড হয়ে বাউফল থানার পাশে ইলিশ চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা। মিছিল ও সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের তিন সহস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি সবাইকে শান্তিশৃঙ্খলার পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান।

সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তালুকদার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মদনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, বাউফল সদর ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম, জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল কামাল ওরফে পল্টু প্রমুখ। আবদুল মোতালেব হাওলাদারের ওপর হামলার ঘটনাকে পরিকল্পিত বলে দাবি করেন তাঁরা। তাঁদের ভাষ্য, আবদুল মোতালেবকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওই হামলা হয়েছিল।

ওই হামলার ঘটনার জন্য সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজকে দায়ী করে বক্তরা বলেন, আ স ম ফিরোজের উপস্থিতিতে ও হুকুমে তাঁর দুই ভাতিজা মনির হোসেন মোল্লা ও আলকাচ মোল্লার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনী দলের ত্যাগী নেতা হাওলাদারের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছে। বক্তারা আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, বাউফলে আ স ম ফিরোজ ও মোতালেব হাওলাদারে মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। ২০২০ সালের ২৪ মে বাউফল থানা-সংলগ্ন সড়কের ওপর তোরণ নির্মাণ নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তাপস কুমার দাস নামের এক যুবলীগ কর্মী নিহত হন। বিভিন্ন বিরোধকে কেন্দ্র করে গত বছরের ৬ মে আ স ম ফিরোজ ও আবদুল মোতালেব–সমর্থিত পক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয়। এ সময় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।