২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ পা নিয়েই দোকান কর্মচারীর কাজ করে কিশোর হাশেম

উরু ও পায়ে গুলির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন আবুল হা‌শেম
ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের ভয়ে ফুফাতো ভাইয়ের দোকানের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন আবুল হাশেম (১৬)। পুলিশ সেই দোকানের শাটার খুলে গুলি করে। ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ে কিশোর হাশেম। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে এলে প্রাণে বেঁচে যায় সে। সেখান থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। অর্থাভাবে পায়ের চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত পা নিয়ে এখন হাশেমকে পরিবারের ভরণপোষণ সামলাতে দোকান কর্মচারীর কাজ করতে হচ্ছে।

আবুল হাশেমের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার আচারগাঁও ইউনিয়নের সিংদই গ্রামে। তার বাবা আবদুল হেলিম গ্রাম পুলিশ বাহিনীর দফাদার। হেলিম জানান, নিজের যৎসামান্য আয় ও ছেলের আয় মিলিয়ে তাঁর সংসার চলছিল। কিন্তু জুলাইয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তাঁর কিশোর ছেলেটি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সবকিছু ওলট–পালট হয়ে যায়।

কিশোর আবুল হাশেম জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর সংসারের হাল ধরার জন্য চার বছর আগে গাজীপুরের সাইনবোর্ড এলাকায় ফুফাতো ভাই হুমায়ুনের মনিহারি দোকানে যোগ দেয়। গত ২০ জুলাই অন্যান্য দিনের মতো সে দোকানে বেচাকেনায় ব্যস্ত ছিল। ওই সময় দোকান থেকে কিছুটা দূরে প্রধান সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল যাচ্ছিল। সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা ওই মিছিলে ধাওয়া করে। তখন মিছিলকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। তার দোকানের কাছাকাছি পুলিশ সদস্যরা চলে এলে হাশেম ভয়ে দোকানের শাটার নামিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে তার ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবির দৌড়ে এসে দোকানে প্রবেশ করেন। এ সময় দোকানের বাইরে থেকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য শাটার উঠিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

আবুল হাশেম বলে, পুলিশের গুলিতে তারা দুজনই দোকানের ভেতরে লুটিয়ে পড়েন। একসময় তাদের নড়াচড়া দেখতে পেয়ে পুলিশ সদস্যরা আবার এসে রাইফেল তাক করে। কিন্তু সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলে পুলিশ চলে যায়। দুজনকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবিরের মৃত্যু হয়। পাঁচ দিন ভর্তি থাকার পর ছুটি পায় হাশেম। গুলিবিদ্ধ পা নিয়ে নান্দাইলে বাড়িতে আসে।

হাশেমের বাবা আবদুল হেলিম জানান, ধারদেনা করে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করে ছেলের পায়ের চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছেন। কিন্তু পুরোপুরি ভালো হয়নি। যন্ত্রণায় কাতরায় তাঁর কিশোর ছেলেটি। চিকিৎসক তাঁদের বলেছেন, ছররা গুলি বের করতে হলে বেশ কটি অস্ত্রোপচার করতে হবে। সেই ধকল তাঁর কিশোর ছেলের শরীর নিতে পারবে না। ফলে যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছে হাশেম।

হুমায়ুন নিহত হওয়ার পর ব্যবসা কিছুদিন বন্ধ থাকে। হুমায়ুনের দোকানটি তাঁর বড় ভাই হজরত আলী দেখভাল করছেন। সেই দোকানে ক্ষতিগ্রস্ত পা নিয়ে আবার কাজ শুরু করেছে হাশেম। বসে বসে দোকানে বেচাকেনা করে সে। পায়ে তীব্র যন্ত্রণা থাকলেও পরিবারের কথা ভেবে আবারও চাকরি নিতে হয়েছে তাকে।

হাশেমের জন্য সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন তার বাবা হেলিম। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘শুনেছি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হতাহত ব্যক্তিদের তালিকা করা হচ্ছে। কিন্তু আমার ছেলের খোঁজ নেয়নি কেউ। তাই পুলিশের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত পা নিয়ে উপার্জনের পথে নামতে হয়েছে আমার ছেলেকে। বসে থাকলে কে খাওয়াবে। কীভাবে চলবে আমার পরিবার?’