পীরগঞ্জে আওয়ামী লীগে বিভাজন, সুযোগ এনে দিতে পারে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাকে
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে দুজন আওয়ামী লীগের নেতা। অপরজন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্ব। এই দ্বিধাবিভক্তি সুযোগ হিসেবে ধরা দিতে পারে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার কাছে।
আগামীকাল বুধবার ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এবার চেয়ারম্যান পদে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুল ইসলাম (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক (ঘোড়া) এবং উপজেলা বিএনপির সাবেক সমবায়–বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা বিএনপির প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য সুকুমার রায় (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় সুকুমার রায়কে সম্প্রতি বহিষ্কার করেছে দলটি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই উপজেলায় দলের দুই প্রার্থী থাকায় নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এই বিভক্তি উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হককে সমর্থন দিয়েছেন। সম্প্রতি হাফিজ উদ্দিনের ছেলে শামসু হাবিব ও উপজেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দবিরুল ইসলাম ঘোড়া প্রতীকের নির্বাচনী সভায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আর এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেছে নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আখতারুল ইসলামকে (মোটরসাইকেল)। তাঁদের ঘিরে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আর এ বিভক্তি দলটির ভোটও বিভক্ত করে ফেলেছে।
গতকাল সোমবার প্রচারণা করতে গিয়ে আখতারুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘প্রতিপক্ষ প্রার্থী আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে। ঘোড়া প্রতীকের লোকজন বলে বেড়াচ্ছেন, প্রশাসনকে দিয়ে ভোটের ফলাফল তাঁদের পক্ষে নেবেন।’
এ অভিযোগ অস্বীকার করে রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘ভোট নিয়ে এ উপজেলায় কোনো আশঙ্কা নেই। এখানকার পরিবেশ একেবারেই শান্ত। আমরা শান্তভাবেই এ নির্বাচন পার করতে চাই। নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা থেকে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী এসব অভিযোগ করছেন।’
সুকুমার রায় উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান। বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও এবার চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ায় দল তাঁকে বহিষ্কার করেছে। অবশ্য এটি নিয়ে তিনি তেমন ভাবছেন না। সবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই মাঠে কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের দুই নেতার দ্বন্দ্ব-বিভাজনের সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন তিনি।
সুকুমার রায় বলেন, ‘নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরিবেশ আছে বলেই প্রার্থী হয়েছি। দল বহিষ্কার করলেও বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। দেশের জনগণ পরিবর্তন চায়। এই পরিবর্তনের জন্যই তাঁরা আমাকে ভোট দেবেন।’
পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘এই সরকারের অধীনে সব নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছে। নির্বাচন আমাদের ভাবনায় নেই। আর আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে যে নির্বাচন; তাতে কে জয়ী হলো, তা নিয়েও আমাদের কোনো আগ্রহ নেই।’