অবৈধ বালু ব্যবসা নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের সংঘর্ষ, আহত ৫

দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত কয়েকজনকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার রাতেছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরে আড়িয়াল খাঁ নদে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে সদর উপজেলার পূর্বরাস্তি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর পাশাপাশি কয়েকটি বসতঘরে ভাঙচুর চালানো হয়।

আহত পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের পূর্বরাস্তি এলাকার নিশাত হাওলাদার (২৩), লক্ষ্মীপুর এলাকার সালমান হোসেন (২৩) ও শহরের পুরোনো বাজার এলাকার মুন্না ব্যাপারী (২৩)।

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের পাশেই রাস্তি ইউনিয়নের অবস্থান। এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আড়িয়াল খাঁ নদ। নদে খননযন্ত্র বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাস্তি এলাকার বিএনপি নেতা হাকিম ব্যাপারীর সঙ্গে একই এলাকার বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিঠু হাওলাদারের বিরোধ চলে আসছিল। তাঁরা দুজনই এলাকায় অবৈধভাবে বালু ব্যবসায় সঙ্গে জড়িত। বিষয়টি নিয়ে তাঁদের অনুসারীরা এর আগেও একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন।

সম্প্রতি হাকিম ব্যাপারী ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছে দৈনিক ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করলে মিঠু হাওলাদারের অনুসারীদের সঙ্গে হাতাহাতি ও বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এর জেরে গতকাল রাতে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। সেই সঙ্গে উভয় পক্ষের অন্তত চারটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। পরে অন্তত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তাঁদের উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াদ মাহামুদ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কয়েকজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁরা সবাই দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আহত হন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিঠু হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকাছাড়া। আমাদের লোকজন যারা এলাকায় ব্যবসা–বাণিজ্য করে, তাদের সবার কাছেই হাকিম ব্যাপারী চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত। তিনি এলাকায় আতঙ্ক ও অরাজকতা সৃষ্টি করতেই লোকজন দিয়ে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। গ্রামের লোকজন প্রতিহত করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় বিচার দাবি করছি।’

এ সম্পর্কে জানতে হাকিম ব্যাপারীকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে এ সংঘর্ষের ঘটনাকে ব্যক্তিগত বিরোধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জামিনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হাকিম ব্যাপারী অনেক আগে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের আমলে যুবলীগ করেছেন। এখন যদি তিনি বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম বা আধিপত্য বিস্তার করেন—এ দায় তাঁর নিজের; বিএনপি তাঁর সঙ্গে নেই। আমরা জানি, হাকিম ব্যাপারী বালু ব্যবসাসহ নানা ইসুতে এলাকায় প্রতিপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এগুলো সবই তাঁর ব্যক্তিগত বিরোধ।’

এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা। তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আবার সংঘর্ষ এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।