‘এই উপজেলায় চলতি হলি এই চঞ্চল যা বলবে সেই অনুযায়ী চলতে হবে’

সাবেক ছাত্রদল নেতার বিচার চেয়ে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা পরিষদের সামনে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করেন। ইউএনও–এসিল্যান্ডও এতে অংশ নেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

‘এই উপজেলায় চলতি হলি এই চঞ্চল যা বলবে সেই অনুযায়ী চলতে হবে। এই উপজেলায় তোর কোন বাপ আছে, কে আছে আমি দেখব। এখানে আমার কথায় উপজেলায় উঠতে হবে, বসতে হবে। আমি যা বলব, যে কাগজ আনব, সেটা চোখ বুঝে সই করতে হবে। চোখ দিয়ে দেখা যাবে না।’

কুষ্টিয়া মিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী জহির মেহেদী হাসানের কার্যালয়ে ঢুকে এভাবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে তাঁকে লাঞ্ছিতও করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মিরপুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব আজাদুর রহমানের ছোট ভাই ও  মিরপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউল হক ওরফে চঞ্চল এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে ও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আজ বিকেলে উপজেলা পরিষদের সামনে উপজেলার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন করেছেন। ভুক্তভোগী প্রকৌশলী মিরপুর থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

বেলা তিনটার দিকে উপজেলা পরিষদের সব দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যানার হাতে উপজেলা পরিষদের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়ান। সেখানে ভুক্তভোগী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিবি করিমুন্নেছা ও কয়েকজন কর্মকর্তা বক্তব্য দেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মিরপুর উপজেলা প্রকৌশলী জহির মেহেদী হাসান তাঁর বক্তব্যে বলেন, গতকাল বুধবার তাঁর কার্যালয়ে আতাউল হক ওরফে চঞ্চল একটা ব্যক্তিগত কাগজ নিয়ে আসেন। সম্ভবত কোনো দপ্তরে টেন্ডার জমা দেবেন। সেই কাগজে সই করতে হবে বলে জানান। কাগজটা পড়ে দেখার আগেই সই করতে বলেন। চাপ দিতে থাকেন। এতে অপারগতা জানালে চঞ্চল হুমকি–ধমকি দেন। এরপর চলে যান। আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে তিনি (চঞ্চল) ১০-১২ জন লোক নিয়ে আবার কক্ষে হাজির হন। কক্ষে ঢুকেই বলেন, ‘এই! তুই কালকে কাগজ সই করিসনি ক্যান। এই উপজেলায় চলতি হলি এই চঞ্চল যা বলবে সেই অনুযায়ী চলতে হবে। এই উপজেলায় তোর কোন বাপ আছে, কে আছে আমি দেখব। এখানে আমার কথায় উপজেলায় উঠতে হবে বসতে হবে। আমি যা বলব, যে কাগজ আনব, সেটা চোখ বুঝে সই করতে হবে। চোখ দিয়ে দেখা যাবে না।’ একপর্যায়ে জহির মেহেদী হাসানের মুঠোফোন নিয়ে টেবিলের ওপর ফেলে ভেঙে ফেলেন চঞ্চল।

মানববন্ধনে উপস্থিত ইউএনও বিবি করিমুন্নেছা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘উপজেলা প্রকৌশলীর কক্ষে ঢুকে তাঁকে গালমন্দ করা হয়, তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়। শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এসব সিসিটিভি ফুটেজে আমরা দেখেছি। আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা শক্ত হাতে এগুলো দমন করব। এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর প্রেশার (চাপ) আসছে, যাতে তারা ইললিগ্যাল (অবৈধ) কাজ করেন। এ রকম চাপাচাপি বিভিন্ন দপ্তরে হচ্ছে। ফাইনালি গতকাল প্রকৌশলীকে গালমন্দ করা হয়। আজ ফিজিক্যালি অ্যাসল্ট (লাঞ্ছিত) করা হয়। সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখেছি।’

ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাজী মোহাম্মদ মেশকাতুল ইসলাম, সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফি, উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপক সোহেল রানাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযুক্ত আতাউল হক চঞ্চলের বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে। যোগাযোগ করা হলে আতাউলের বড় ভাই মিরপুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব আজাদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সকালের দিকে কুষ্টিয়া শহরে ছিলাম। শুনেছি, একটা কাগজে সই করা নিয়ে প্রকৌশলীর সঙ্গে আতাউলের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে।’ হুমকি ও তাঁর কথামতো চলতে হবে—এই বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদুর রহমান বলেন, ‘এমন কিছু শুনিনি।’

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম রাত আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ এইমাত্র হাতে পেলাম। অভিযোগ পড়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’