হবিগঞ্জে শ্লীলতাহানির অপমানে কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দাবি
হবিগঞ্জের মাধবপুরে শ্লীলতাহানির অপমান সইতে না পেরে কিশোরীর (১৪) আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে তার সহপাঠীরা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মাধবপুর উপজেলার একটি গ্রামে গত শুক্রবার বিকেলে সহপাঠীদের সামনে প্রকাশ্যে ওই কিশোরীর শ্লীলতাহানি করেন গ্রামের তরুণ নয়ন পাঠান (২০)। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে সে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। মৃত কিশোরী অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। পাশাপাশি উপজেলা কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য ছিল।
এ ঘটনায় গত রোববার রাতে মৃত কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে নয়নসহ আটজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলায় এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত চলা কর্মসূচিতে আসামিদের ছবিসহ পোস্টার, ফেস্টুন হাতে নানা স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। খবর পেয়ে হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (মাধবপুর-চুনারুঘাট সার্কেল) নির্মলেন্দু চক্রবর্তী ও মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক সমাবেশস্থলে ছুটে যান। তাঁরা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, নয়ন এক বছর ধরে উত্ত্যক্ত করছিলেন ওই কিশোরীকে। তাঁর কারণে মেয়েটি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারত না। নয়নের পরিবারের কাছে অসংখ্যবার বিচার দিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। সহপাঠীদের সামনে প্রকাশ্যে কিশোরীর শ্লীলতাহানি করায় অপমান সহ্য করতে না পেরে সে আত্মহত্যা করেছে। ঘটনার চার দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও পুলিশ এখনো অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। তাঁরা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
ওসি মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, মৃত কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ মামলার তদন্ত ও আসামিদের আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাধবপুর কিশোর-কিশোরী ক্লাবের অধীনে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপ্তাহে দুদিন (শুক্র-শনিবার) বিকেলে গান শেখানো হয়। গত শুক্রবার বেলা সাড়ে তিনটায় তিন-চারজন সহপাঠীর সঙ্গে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল মেয়েটি। নয়ন ও তাঁর তিন বন্ধু বিজয় (২০), আরমান (২০) ও ইমন (২০) তাকে পথে পেয়ে উত্ত্যক্ত করেন। তখন সহপাঠীদের নিয়ে মেয়েটি দৌড়ে বিদ্যালয়ে চলে যায়। কিন্তু তখনো গানের ক্লাস শুরু না হওয়ায় ১০-১২ জন সহপাঠীর সঙ্গে বসে ছিল সে। এ সময় নয়নের নেতৃত্বে ৪-৫ জন ওই কক্ষে ঢুকে সবার সামনে তার শ্লীলতাহানি করেন। এরপর সে কান্না করতে করতে বাড়িতে চলে যায় এবং বাড়িতে থাকা কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে।
এ নিয়ে ‘শ্লীলতাহানির অপমান সইতে না পেরে কিশোরীর আত্মহত্যা’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।