সিলেটের ভোলাগঞ্জে বিএনপি নেতার দখল থেকে সরকারি জমি উদ্ধার
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে বিএনপি নেতার অবৈধ দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় প্রায় ৭০ একর জায়গা থেকে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হয়। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই অভিযান চলে।
গতকাল সোমবার প্রথম আলোয় ‘দখলসূত্রে সরকারি জমির মালিক বিএনপি নেতা’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশের পর সিলেটে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এরপরই স্থানীয় প্রশাসন সরকারি জমি উদ্ধারে অভিযানে নামে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দেশের সবচেয়ে বড় পাথর কোয়ারি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে। কোয়ারির পাশে ১০ নম্বর সাইট এলাকায় সরকারের অন্তত ২৭৫ একর উন্মুক্ত জায়গা আছে। ২০০১ সালের দিকে এসব জায়গার বেশির ভাগই দখল নেন স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন। এর মধ্যে বিএনপি নেতা মো. সাহাব উদ্দিনের দখলে চলে যায় অর্ধেকের বেশি জমি। তিনি বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সভাপতির পাশাপাশি জেলা বিএনপির সহসভাপতি। পাশে পাথর কোয়ারি থাকায় দখলকারীরা জায়গাগুলো পাথর ভাঙার মেশিনের মালিকদের কাছে ভাড়া দেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিমে ১১২ একর ও পূর্বে প্রায় ১৫০ একর খাসজমি আছে। এসব জমির বেশির ভাগই অবৈধভাবে ভোগদখল করে আসছিলেন বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিন। তবে সরকার পশ্চিম অংশে স্থলবন্দর নির্মাণ এবং পূর্ব অংশে পর্যটনের উন্নয়নে উদ্যোগ নিলে ২০২৩ সালে জায়গা দখলমুক্ত করে প্রশাসন। এরপর পশ্চিম অংশে স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ৫২ দশমিক ৩০ একর জমি ইজারা নেয় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ভোলাগঞ্জে ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছরের জুন মাসে স্থলবন্দরের নির্মাণকাজ শুরু করে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি পর্যটনের উন্নয়নে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে নিরাপত্তাবেষ্টনীসহ মাটি ভরাটেরও কাজ করে। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৫২ দশমিক ৩০ একর জায়গা বাদে অন্যান্য জায়গার অধিকাংশই আবার দখল করে নেয় আগের প্রভাবশালী চক্রটি। এর মধ্যে প্রায় ১৫০ একর জমি সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ওই একটি সূত্রের অভিযোগ, সাহাব উদ্দিন এসব জায়গা দখল করে তাঁর অনুগতদের দিয়ে পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়েছেন।
আজ বেলা ১১টার দিকে স্থানীয় প্রশাসনের একটি দল সরকারি জমিতে থাকা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাছনাত। এ সময় তাঁদের সঙ্গে পুলিশ, আনসার ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বিকেল চারটা পর্যন্ত অভিযান চলে।
অভিযানসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর সাইট এলাকার কালাসাদক মৌজার ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১০২, ১০৩ ও ১০৫ নম্বর দাগের প্রায় ৭০ দশমিক ০৯ একর জমি থেকে অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করা হয়। এসব স্থানে থাকা পাথর ভাঙার (স্টোনক্রাশার মিল) ছোট-বড় ১০০ কল উচ্ছেদের পাশাপাশি প্রায় ৫০টি টিনশেড ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাছনাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ অভিযান চালিয়ে ১০০ স্টোনক্রাশার মিল ও অর্ধশতাধিক টিনশেড ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফের যাতে ওই সরকারি জায়গা দখল না হয়, সে ব্যাপারেও আমাদের কড়া নজরদারি থাকবে। প্রয়োজনে অভিযান অব্যাহত থাকবে। ওই এলাকায় অবৈধ দখল ঠেকাতে আমরা আগেও অভিযান চালিয়েছি।’