মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছে হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে প্রান্তি, পড়ার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তা
বাবা রমেন কুমার বিশ্বাস দিনমজুরের কাজ করেন। মা চঞ্চলা বিশ্বাস মুড়ি ভেজে বাজারের দোকানে দোকানে বিক্রি করেন। এই যৎসামান্য আয়ে কোনোরকমে চলছে পরিবারটির দিন। এই দম্পতির মেয়ে প্রান্তি বিশ্বাস সব বাধা জয় করে চলতি বছর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এ খবরে খুশির সঙ্গে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পরিবারটি। তাদের তাড়া করে ফিরছে মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, সে আতঙ্ক।
ফরিদপুর সদরের কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের হাট গোবিন্দপুর উত্তরপাড়া গ্রামের মেয়ে প্রান্তি। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সে ছোট। তাঁর ভাই রাহুল বিশ্বাস একটি বেসরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ডিপ্লোমা পাস করে এখন চাকরি খুঁজছেন।
হাট গোবিন্দপুর বাজার এলাকার পূর্বপাশে কানাইপুর-খলিলপুর গ্রামীণ সড়কের পাশে প্রান্তিদের বাড়িটি দুই শতাংশ জমির ওপর অবস্থিত। বাড়িটি ইটের হলেও দরজা-জানালা পাটখড়ি দিয়ে আটকানো। মেঝে কাঁচা। পরিবারের সদস্যরা জানান, তিন কক্ষের এই ইটের বাড়ি প্রান্তির মাতামহ (নানা) তাঁদের করে দেন। তবে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু হওয়ায় বাড়ির কাজ শেষ হয়নি। এরপর আর ঘরের কাজ এগিয়ে নিতে পারেননি প্রান্তির বাবা রমেন বিশ্বাস। তখন থেকেই অসমাপ্ত এই ঘরে বসবাস করছেন পরিবারের সদস্যরা।
আজ সোমবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় প্রান্তির সঙ্গে। পাশে ছিলেন তাঁর মা ও ভাই। প্রান্তি জানান, ২০২২ সালে কানাইপুরের বেগম রোকেয়া কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বিজ্ঞান বিভাগে পান গোল্ডেন জিপিএ-৫। ২০২৪ সালে এইচএসসি পাস করেন ফরিদপুর সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে। সেবারও পান জিপিএ-৫। প্রান্তি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার। কিন্তু ফরিদপুরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোনো কোচিংয়ের ব্যবস্থা নেই, এ জন্য মেডিকেলে পড়ার প্রস্তুতি শুরু করি।’
মেয়ের এত বড় সাফল্যে একবার হাসছেন, একবার কাঁদছেন মা চঞ্চলা বিশ্বাস। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘মেয়ে ডাক্তারিতে সুযোগ পাইছে। শুনছি, এতে অনেক খরচ। কীভাবে এ খরচ জোগাব? সংসারের যে অবস্থা, তাতে তিনবেলা খেয়ে বেঁচে থাকা কষ্ট। সেখানে ওর জন্য প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করার ক্ষমতা তো আমাদের নাই। জানি না এ খরচ কীভাবে জোগাড় হবে।’