দীর্ঘ ২ বছর ৯ মাস পর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের হিমছড়ির বালুচরে পুঁতে ফেলা বিশাল একটি তিমির কঙ্কাল উত্তোলন করা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে কঙ্কাল সংগ্রহের কাজে নামেন কক্সবাজার বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। এ সময় কঙ্কাল সংগ্রহের দৃশ্য দেখতে ঘটনাস্থলে ভিড় জমান লোকজন। সংগ্রহের পর কঙ্কালটি জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শন করা হবে জানা গেছে।
২০২১ সালের ২১ এপ্রিল মৃত তিমিটি হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসে। পরে সৈকতের বালুচরে গর্ত খুঁড়ে তিমি মাছটি পুঁতে ফেলা হয়। তিমিটির ওজন ছিল প্রায় ৯ মেট্রিক টন, দৈর্ঘ্য ৪৬ ফুট ও প্রস্থ ১৬ ফুট। গভীর বঙ্গোপসাগরে তিমিটির মৃত্যু হওয়ায় শরীরের বিভিন্ন অংশ পচে বিকৃত হয়ে গিয়েছিল।
কক্সবাজারের বাংলাদেশ সমুদ্র মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ২০২১ সালের ২১ এপ্রিল জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছিল তিমিটি। পুঁতে ফেলা তিমির শরীরের মাংস এত দিনে ঝরে গেছে। এখন কঙ্কাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বালুর নিচ থেকে তিমির শরীরের অনেক হাড়গোড় সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি কক্সবাজার সমুদ্র মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে নেওয়া হবে। হাড় জোড়া দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কঙ্কাল তৈরি করে ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য স্থানান্তর করা হবে, যা দর্শনার্থীদের দেখার পাশাপাশি গবেষণার কাজেও লাগানো হবে।
সোমবার বিকেল চারটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, একটি খননযন্ত্র দিয়ে সৈকতের বালু সরিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছিল তিমির হাড়গোড়। এ জন্য পুকুরের আকারের বিশাল গর্ত খোঁড়া হয়। সাতজন শ্রমিক বালু সরিয়ে কঙ্কাল তোলার কাজে সহযোগিতা করেন।
সৈকত থেকে তোলা তিমির হাড় জোড়া দিয়ে কঙ্কাল তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা হাড় জোড়া দিয়ে এর পূর্ণাঙ্গ রূপ দেবেন।
পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা বলেন, বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে তিমি ভেসে আসে। ২০২১ সালের ৩ মে টেকনাফ সমুদ্রসৈকতে ৫ মেট্রিক টন ওজনের আরও একটি তিমি ভেসে এসেছিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর ও হিমছড়ি সৈকতে ৮ ও ১০ মেট্রিক টন ওজনের দুটি মৃত তিমি ভেসে আসে। এসব তিমি বালুচরে পুঁতে ফেলা হয়েছিল। গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি জাহাজের পাখার আঘাত কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে তিমিগুলোর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
তবে এ পর্যন্ত ভেসে আসা কোনো তিমির মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করা হয়নি।