নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছনার এক মাস হয়েছে। ঘটনার পর তিনি বাড়ি ফেরেননি। অজানা আতঙ্কে তিনি বাড়ি ফিরছেন না বলে প্রথম আলোকে বলেছেন। তবে তাঁর বাড়িতে পুলিশ পাহারা আছে।
গতকাল শনিবার মুঠোফোনে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ও শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের মতামত নিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় কলেজ খুলতে হবে। তার আগে এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে সেখানের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। এসব পদক্ষেপ না নিয়ে কলেজ খুললে আবারও অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’ অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখতে চান কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকার পরিবেশ শান্ত করে কলেজ খুললে কলেজে যাব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করব কি না।’
এদিকে গত ১৮ জুন শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার পর থেকে মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজ বন্ধ আছে। ঈদের ছুটির পর সারা দেশের কলেজ খুললেও এই কলেজ খোলেনি। তবে ২০ জুলাই কলেজটি খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অচিন কুমার চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের সার্বিক বিষয় বিবেচনায় এনে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ জুলাই কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও কলেজ পরিচালনা পরিষদের শিক্ষক প্রতিনিধি শেখ আকিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ এখন আত্মগোপনে আছেন। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না।
অধ্যক্ষ লাঞ্ছনার ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও নড়াইল সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহামুদুর রহমান (ওসির দায়িত্বে) বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা পরিয়েছিলেন। ওই কলেজে ও এলাকায় পুলিশ দিনরাত টহল দিচ্ছে। কারও আতঙ্কের কারণ নেই।
গত ১৮ জুন নড়াইল সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। এর আগের দিন ১৭ জুন ওই কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিজের ফেসবুকে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার পক্ষ নিয়ে ছবিসহ একটি পোস্ট দেয়। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে স্বপন কুমার বিশ্বাস ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে ডাকেন। কলেজের শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে ওই শিক্ষার্থীকে তাদের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ সদস্যরা ওই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যেতে চাইলে উত্তেজিত ছাত্ররা বাধা দেয়। তখন নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) বিষয়টি জানানো হয়।
বিকেল চারটার দিকে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস ও ওই শিক্ষার্থীকে কলেজের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে বের করা হয়। নিচতলার কলাপসিবল গেটের সামনে আনার পর তাঁদের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর থানায় নেওয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন।