এসির তাপমাত্রার নির্দেশনা না মানলে সেই এলাকায় অতিরিক্ত লোডশেডিং: উপদেষ্টা

সিরাজগঞ্জে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার সয়দাবাদ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, রমজান মাসে সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা হবে না।

আজ শুক্রবার বিকেলে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ এলাকায় ৬৮ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্টের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ কথাগুলো বলেন।

জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমানে শীতকালে সারা দেশে ৯–১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। গরমকালে এই চাহিদা ১৭–১৮ হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। এ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে অর্থের ব্যবস্থা করেছি। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেসব উপকরণ দরকার, যেমন গ্যাস ও কয়লার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর সঙ্গে জনগণের সহযোগিতা পেলে আমার মনে হয় না আর লোডশেডিংয়ের প্রয়োজন হবে।’

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, শীত ও গরমকালের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাহিদার পার্থক্য হয় দুটি কারণে। এর মধ্যে একটি হলো সেচ। সেচের জন্য প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অতিরিক্ত লাগে। এ সেচের বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অন্য কারণটি হচ্ছে এয়ার কুলিং বা এসি। এ জন্য প্রায় পাঁচ–ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসির তাপমাত্রা যদি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি থাকে, তাহলে দু–তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।

সাশ্রয় করা বিদ্যুৎ দিয়ে অতিরিক্ত চাহিদার অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পারব উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ জন্য উপদেষ্টা পরিষদের সবার কাছে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বাণিজ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সব ব্যাংক এবং সচিবালয়ের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আধা সরকারি পত্র দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ বাসাবাড়িতে এটা কার্যকর করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের এ পদ্ধতি কার্যকরের বিষয়ে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু ফিডারের মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। যেসব এলাকায় আমাদের অনুরোধ না মেনে এসির তাপমাত্রা নির্দেশনার অতিরিক্ত দিয়ে ব্যবহার করবে, সেসব এলাকায় ফিডারগুলোতে চাপ অনুভব হবে। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুতের ব্যবহার নির্ধারণ করা যাবে। আমরা বলে দিয়েছি, যারা এই নির্দেশনার বাইরে যাবে, সেসব এলাকায় ফিডারগুলোতে অতিরিক্ত লোডশেডিং দেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, এখনো বিদ্যুৎ খাতে সরকারিভাবে ৪২ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। এই ভর্তুকি থেকে কাটিয়ে উঠতে কোম্পানির দামে বিদ্যুৎ কেনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ সময় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এহছানুল হক, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গণপতি রায়, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুল ইসলাম, সাসেক প্রকল্প-৩-এর ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সিরাজগঞ্জ শহরের যমুনা নদীর হার্ড পয়েন্টে সাত দিনব্যাপী সপ্তম জাতীয় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ক্যাম্পের (কমডেকা) সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।