বগুড়ায় শূন্য দুই সংসদীয় আসনেই প্রার্থী হতে চান হিরো আলম
বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের পর বগুড়ায় শূন্য ঘোষিত জাতীয় সংসদের দুটি আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর)—এই দুই আসনের উপনির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে চান।
জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর বগুড়ার দুই আসন থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন হিরো আলম।
বুধবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে হিরো আলম প্রথম আলোকে বলেন, গত নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় ভোট বর্জন করেছিলেন। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে উপনির্বাচনে প্রথমে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু দল মনোনয়ন দেয়নি। এখন বগুড়া-৪ ও ৬ দুই আসন থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
হিরো আলমের দাবি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার সঙ্গে মনোনয়ন নিয়ে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। তিনি ওই নেতাকে বলেছেন, বগুড়ার দুই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে তাঁকে মনোনয়ন দিলে দল ও ব্যক্তি জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
হিরো আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমাকে যোগ্য মনে করলে নৌকা পাব। না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আগামী রোববার বগুড়ায় গিয়ে দুই আসনেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করব। এরপর নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে।’
দুই আসনে প্রার্থী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে অনেক কর্মী-সমর্থক তাঁর জন্য কাজ করেছেন। ভোট সুষ্ঠু হলে তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত ছিল। এ ছাড়া বগুড়া-৬ আসনে তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাঁর অনেক ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন। তাঁদের অনুরোধেই তিনি বগুড়া-৬ থেকেও মনোনয়ন নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিস্থিতি বুঝে পরে একটি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম দাখিল করেছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ের দুই দফায় তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়। পরে উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান আশরাফুল আলম। ব্যাপক আলোচনার মধ্যে সিংহ প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচন করেন। তবে নির্বাচনের দিন কারচুপি ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
হিরো আলম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৮ সালে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। সেই কমিশন এখন নেই। এবারের উপনির্বাচনে ইভিএম ছাড়াও প্রতিটি ভোটকক্ষে সিসি ক্যামেরা থাকবে। কমিশন যদি ভোটারের আস্থা ফেরানোর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে সুষ্ঠু ভোট হবে না। জীবনের বিনিময়ে হলেও এবার দিনের ভোট রাতে হতে দেবেন না।
হিরো আলম আরও বলেন, বগুড়া এখন অবহেলিত। ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেতার পর প্রতিনিধিরা সংসদে গিয়ে সাধারণ মানুষের কথা বলেন না। তিনি নির্বাচিত হলে সংসদে গিয়ে মাটি ও মানুষের কথা তুলে ধরবেন। বগুড়ায় বিমানবন্দর, সিটি করপোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের ব্যবস্থা করবেন। সর্বোপরি গরিব ও দুঃখী মানুষের পাশে থাকবেন।
বগুড়ার প্রত্যন্ত এরুলিয়া গ্রামে একসময় সিডি বিক্রি করতেন হিরো আলম। সিডি যখন চলছিল না, তখনই মাথায় আসে কেব্ল সংযোগ ব্যবসার। কেব্ল সংযোগ ব্যবসার সুবাদে মিউজিক ভিডিও তৈরি শুরু করেন। ইউটিউবে প্রায় ৫০০টি মিউজিক ভিডিও ছাড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। ইউটিউবে প্রকাশ করা তাঁর নিজস্ব ভিডিওগুলোও অনেক জনপ্রিয়। ভিডিওগুলোর নির্দেশনাও দেন তিনি।
বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজ ও বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন ১১ ডিসেম্বর স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করেন। আসন দুটি শূন্য ঘোষণার পর ১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, উপনির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ৫ জানুয়ারি। ৮ জানুয়ারি মনোনয়ন বাছাই ও ১৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ থাকবে।