পাবনায় ২ ছাত্র নিহতের ঘটনায় মামলা, সাবেক সংসদ সদস্যসহ আসামি ১০৩
পাবনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিতে দুই ছাত্র নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র নিহত জাহিদুল ইসলামের (১৮) বাবা মো. দুলাল উদ্দিন বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় পাবনা সদর আসনের সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য গোলাম ফারুকসহ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ১০৩ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্রদের দিকে গুলি করা হুকুম দেওয়ার অভিযোগে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদকে মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রওশন আলী প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
৪ আগস্ট বেলা সোয়া ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভে নামেন ছাত্র-জনতা। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের প্রধান ফটক থেকে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের ট্রাফিক মোড়ে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীদের দিকে কয়েকটি গুলি ছোড়েন কয়েকজন। এতে দুই ছাত্র নিহতের পাশাপাশি অন্তত ২৫ জন গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদের গাড়িতে আগুন দেন। বিক্ষুব্ধ লোকজনের দাবি, ওই গাড়ি থেকে নেমে গুলি করা হয়।
গুলিতে নিহত দুজন হলেন সদরের চর বলরামপুর গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে ও পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (১৮) ও হাজিরহাট বেতেপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ও শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ইসলাম নিলয় (১৬)।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন ছাত্র-জনতা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছিলেন। তখন মামলার আসামিরা রড, বাঁশের লাঠি ও দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করেন। বিনা উসকানিতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে গুলি করতে থাকেন। এতে ছাত্র-জনতা ভয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকেন। আওয়ামী লীগের নেতা আবু সাঈদের নির্দেশে ছাত্রদের লক্ষ্য করে দুজন গুলি করতে থাকেন। এতে বাদীর ছেলেসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য বিদায়ী সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি জানান, কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে তাঁদের কোনো অবস্থান ছিল না। তাঁরা চেয়েছিলেন, ছাত্রদের ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠিত হোক। তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, যাতে সুযোগসন্ধানীরা পাবনায় কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে। ৩ আগস্ট থেকে সুযোগসন্ধানীরা ছাত্রদের মধ্যে প্রবেশ করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। ৪ আগস্ট সুযোগসন্ধানীরা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সামনে থেকে ছাত্রদের মধ্য শহরে নিয়ে আসে এবং ছাত্রদের পরিকল্পিতভাবে উত্তেজিত করে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় বুলবুল কলেজ সড়ক ও থানা সড়কে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে দুই ছাত্র নিহত হন। এরপর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা ও আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের চেষ্টা শুরু হয়। এ সময় পুলিশ নেতা–কর্মীদের রক্ষায় ব্যর্থ হয়। পরে আত্মরক্ষায় দলীয় নেতা–কর্মীরা তাঁদের লাইসেন্স করা অস্ত্র নিয়ে কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। তবে এতে কেউ হতাহত হননি।