দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে, ঠান্ডায় হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগী

পঞ্চগড়ে শীতজনিত রোগে শিশু রোগীর চাপ বাড়ায় অনেকেই বারান্দার মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আজ সকাল ১০টার দিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায়ছবি: প্রথম আলো

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আট মাস বয়সী মুস্তাকিনকে নিয়ে গত রোববার থেকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে আছেন মা মেরিনা আক্তার (২৮)। শয্যা না থাকায় শিশুটিকে বারান্দার মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। টানা কয়েক দিনের চিকিৎসায় মুস্তাকিনের শারীরিক অবস্থা এখন কিছুটা উন্নতির দিকে।

মেরিনা পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের সর্দারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। আজ বুধবার সকাল পৌনে ১০টায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের বারান্দায় তাঁর সঙ্গে কথা হয়। হাসপাতালটিতে কয়েক দিন ধরে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর চাপ বেড়েছে। শিশুদের নিয়ে এভাবেই হাসপাতালে থাকছেন মা–বাবা ও অভিভাবকেরা। শয্যার সংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালটির ওয়ার্ড ও বারান্দার মেঝেতে রেখে শিশুসহ ও অন্য রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আজ সকাল ৯টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। টানা কয়েক দিন ধরে ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে পঞ্চগড়ে হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ঠান্ডাজনিত এসব রোগ এড়িয়ে চলতে সচেতন থাকার পাশাপাশি শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

সকালের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে কাজে বের হয়েছেন সাধারণ মানুষ। আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সুরিভিটা এলাকার পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কে
ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত ১০০ শয্যার এই সদর হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৩ জন, নারী ১০৫ জন এবং নবজাতক ও শিশু ৫৬টি। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে ২ ঘণ্টায় হাসপাতালে শীতজনিত ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তি হয়েছে আরও ৫টি।

সকাল ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ২২টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ৪৭ শিশু। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ঠান্ডাজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। এ ছাড়া হাসপাতালের নবজাতক পরিচর্যা কেন্দ্রটিতে ১১টি শয্যার বিপরীতে ১৪ নবজাতক ভর্তি আছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন নারী, শিশু ও পুরুষ মিলে অন্তত ৪০০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আজ সকাল ৯টার দিকে ৮ মাস বয়সী ছেলে সাফিনকে হাসপাতালে ভর্তি করেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার সিতাগ্রাম এলাকার বাসিন্দা সায়দার আলী (৩৫)। তিনি বলেন, ‘তিন দিন থেকে ছেলেটার পাতলা পায়খানা আর বমি। আজ সকালে পানি খাওয়ার জন্য ছটফট করছে। এ জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখানে সিট (শয্যা) নাই। এ জন্য বারান্দার মেঝেতে বিছানায় রেখে স্যালাইন দিয়েছে।’]

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের শয্যার তুলনায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশির ভাগ শিশুরা আসছে। শিশুদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগ এড়াতে বাড়তি যত্ন নিতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের যেন কোনোভাবেই ঠান্ডা না লাগে, বাসি খাবার না খায়—সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়া এসব রোগবালাই ঠেকাতে অবশ্যই শিশুদের যেসব টিকা আছে, সেগুলো সঠিক সময়ে নিতে হবে। শীতের সময় বয়স্ক ব্যক্তিদেরও বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত।